আমাদের ভাবনার গণ্ডিটা একটু প্রসারিত হোক

zahir-baborসোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচার নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তোলপাড়। একজন ‘হিজাবী’ নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে-এমন খবরে প্রথম দিকে তথাকথিত প্রগতিশীল গণমাধ্যমগুলোর কিছুটা পিছুটান ছিল। দায়সারা গোছের সংবাদ পরিবেশ করেই সবাই থেমে থাকে। তবে ইসলামপন্থী ফেসবুক ‘মুজাহিদরা’ এটাকে ইস্যু হিসেবে সামনে এনে প্রতিবাদের বন্যা বইয়ে দেন। তাদের দাবি ‘হিজাবী; একজন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচার করতে হবে। তবে দুই দিনের মাথায় ওই শ্রেণিটির ঘোর কেটে যায়। খবর বেরিয়ে আসে তনু মাঝে মাঝে হিজাব পরলেও নাট্যকর্মীও ছিল। হিজাব ছাড়াও তনুর খোলামেলা আরও ছবিও আছে। সুতরাং এটাকে লুফে নিলো শাহবাগের নেথিয়ে পড়া, কয়েক ভাগে বিভক্ত কথিত গণজাগরণ মঞ্চ। একজন সংস্কৃতি কর্মীর ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে সক্রিয় হয়ে উঠল তারা। এমনকি কুমিল্লায় লংমার্চও করলো। সেই হত্যার বিচার দাবিতে এখনও আন্দোলন অব্যাহত আছে।
একদল ‘হিজাবধারী’ নারী ধর্ষিত ও হত্যা হওয়ার প্রতিবাদে সরব; আরেক দল সংস্কৃতিকর্মী নারী ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে সরব। আমরা কি ভাবনার গণ্ডিটা একটু প্রসারিত করতে পারি না? প্রতিটি ধর্ষণই জঘন্য অপরাধ; প্রতিটি হত্যাই দণ্ডনীয়। ‘হিজাবধারী’ একজন নারী ধর্ষিত হলে একজন মানুষ হিসেবে যে খারাপটুকু লাগার কথা; একজন ‘হিজাবহীন’ নারী ধর্ষিত হলেও ততটুকুই লাগার কথা। একজন ‘সংস্কৃতিকর্মী’ ধর্ষিত হলে আমি প্রতিবাদ করবো আর গ্রাম-বাংলার ‘অবলা’ কোনো নারী ধর্ষিত হলে আমি কি চুপ থাকবো? এই প্রান্তিক নীতি থেকে আমরা কি বেরিয়ে আসতে পারি না?
প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যায় আমার প্রতিবাদ থাকা চাই। তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার পরও আরও অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণের যে কুখ্যাতি ছিল সেটা ইতোমধ্যে আমাদের দেশেও ঘটে গেছে। প্রতিদিনই একাধিক ধর্ষণের ঘটনা সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছে। এগুলো নিয়ে তো আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই! হত্যা-ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমাদের সবারই সোচ্চার হওয়া দরকার; তবে সেটা যেন আমাদের মতলবি উদ্দেশে না হয়।

গেন্ডারিয়া
০৭.০৪.২০১৫

*

*

Top