সরকারি অর্থে মডেল মসজিদ ও শাহরিয়ার কবিরদের গায়ে জ্বালা

জহির উদ্দিন বাবর
Model-mosque_zahirbaborসরকার সারাদেশে পাঁচ শতাধিক মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়ে। এর অংশ হিসেবে গত ৫ এপ্রিল নয়টি মসজিদের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা পর্যায়ে চার তলা এবং উপজেলা পর্যায়ে তিন তলার হবে মসজিদগুলো। প্রতিটি মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১৫/১৬ কোটি টাকা।  মসজিদগুলো হবে বেশ দৃষ্টিনন্দন। সব মসজিদের মডেল হবে অভিন্ন। মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হবে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

উদ্দেশ্য যাই হোক, আপাত দৃষ্টিতে সরকারের এই উদ্যোগে খুশি দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। কয়েক লাখ মসজিদের এই দেশে আরও পাঁচশ মসজিদ যুক্ত হবে তাতে দোষের কিছু নেই। তাছাড়া দিন দিন যে হারে মানুষ বাড়ছে এবং দীনের প্রতি মানুষ যেভাবে ঝুঁকছে সে অনুযায়ী মসজিদ বাড়ছে না। সরকার তাদের যত নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নেই মসজিদগুলো করুক এর দ্বারা দেশের ধর্মীয় জনগোষ্ঠী কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।

কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগে দেশের সিংহভাগ মানুষ খুশি হলেও খুশি হতে পারেননি মুসলিম নামধারী কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী। তারা নামে মুসলমান হলেও সবসময় ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত। তাদেরই একজন শাহরিয়ার কবির। তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি। গত ৬ এপ্রিল চট্টগ্রামে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক অনুষ্ঠানে তিনি মডেল মসজিদ করার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। আওয়ামী লীগপন্থী বুদ্ধিজীবী হলেও সরকারপ্রধানের সমালোচনা করেছেন বেশ জোরালোভাবে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এই দাবিটা কে করেছে, কে বলেছে আমাদের মডেল মসজিদ বানিয়ে দিতে হবে। আমাদের কি মসজিদের অভাব রয়েছে? এই দাবিটা কি জামায়াত-হেফাজত করেছে? হেফাজতও তো কখনও দাবি করেনি যে, আমাদের দেশে সরকারের টাকায় মসজিদ মাদরাসা করতে হবে।’

কথিত এই বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘ইসলামের বিধান যারা জানেন তাদের জানা, সরকারিভাবে মসজিদ মাদরাসা বানানো যায় না। মাদরাসা-মসজিদ এসব ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করবে। জনগণের পয়সা এগুলো চলবে। দেওবন্দি মাদরাসায় রাষ্ট্রের কাছ থেকে কখনও টাকা নেয়া হয় না। তারা বলেছে এটা হারাম। তাহলে এই হারাম কাজটা কেন আমাদের সরকার করেছে?’

শাহরিয়ার কবিরের এই বক্তব্য দ্বারাই বোঝা যায় তিনি কোন মানসিকতার লোক। সুযোগ পেলে বরাবরই তিনি ইসলাম, মুসলমান ও আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন। কথিত এই বুদ্ধিজীবী নামে মুসলমান হলেও সবসময় ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের কষে গালি দিতে পছন্দ করেন। আলেম-ওলামার খুঁত ধরাই তার কাজ। এজন্য তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের কাছে খুব প্রিয়। তাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির পদ অলঙ্কৃত করেন। মুসলিম কোনো ইস্যুতে কখনও তাকে ‘টু’ শব্দটি করতে না দেখলেও হিন্দুদের পায়ে কাঁটা বিঁধলেও তিনি হু হু করে কেঁদে উঠেন। বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের অধিকার রক্ষায় বরাবরই তিনি খুব সরব।

শাহরিয়ার কবির বিভিন্ন ইস্যুতে যখন কথা বলেন তখন নিজেকে খুব পণ্ডিত হিসেবে উপস্থাপন করেন। এমনকি ইসলাম সম্পর্কে তার খুব জানাশোনা এটাও প্রকাশের চেষ্টা করেন। যদিও ভেতরে ফাঁপা, ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাও রাখেন না। এখানেও তিনি নিজের জ্ঞান জাহির করার চেষ্টা করেছেন। কোনটা জায়েজ আর কোনটা জায়েজ না সেটার ‘ফতোয়া’ দিয়েছেন। সরকারি টাকায় মসজিদ করা যাবে না এটা তিনি কোথায় পেয়েছেন সেটা বলেননি। ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখেন না তবুও প্রায়ই ইসলামি রেফারেন্স দিতে দেখা যায় তাকে। এটা নিজের অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়।

এদেশে মসজিদ-মাদরাসার শত্রুদের তালিকা করলে শাহরিয়ার কবিরের নাম প্রথম কাতারে আসবে। সুতরাং মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হতে দেখলে তার গায়ে জ্বালা শুরু হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা যদি তাকে জিজ্ঞেস করি সরকারি টাকায় মসজিদ মাদরাসা করলে প্রশ্ন তোলেন কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে জনগণের টাকায় যখন সরকারিভাবে মন্দির স্থাপিত হয় তখন আপনারা কোথায় থাকেন? প্রতি বছর মুসলমানদের ট্যাক্সের টাকায় দেশে হাজার হাজার পূজামণ্ডপ করে দেয় সরকার, তখন আপনাদের মুখে কুলুপ আঁটা থাকে কেন? এর কারণ হলো আপনারা একচোখা। একটি বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেন বলে সাদা-কালো পরখ করার ক্ষমতা আপনাদের নেই।

মসজিদ-মাদরাসা জনগণের স্বতস্ফূর্ত দানে যেমন হতে পারে তেমনি সরকারি কোষাগার থেকেও হতে পারে। কারণ সরকারের তো আর আলাদা কোনো তহবিল নেই যা আসমান থেকে নাজিল হয়। জনগণের টাকাতেই গড়ে উঠে সরকারের তহবিল। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। কত অহেতুক কাজে ব্যয় হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। সেখানে সরকারি টাকায় মসজিদ করা এটা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। এর দ্বারা দেশের ৯০ ভাগ মানুষ খুশি হবে। শাহরিয়ার কবিরদের মতো হাতেগোনা কিছু লোকের গায়ে জ্বালা শুরু হলে কিছু করার নেই।

*

*

Top