‘স্বীকৃতি না পাওয়ায় খেদ নেই, প্রতিদান চাই আল্লাহর কাছে’

Zahirbabor.comশফিউদ্দীন সরদার। একজন ঐতিহাসিক উপন্যাস রচয়িতা। ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস রচনায় নতুন এক ধারার সূচনা করেছেন। শুধু বাংলার মুসলিম ইতিহাসের বিভিন্ন পরিক্রমাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত তাঁর রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ২২টি। রগরগে কাহিনী ও রোমাঞ্চকর বর্ণনার তথাকথিত জনপ্রিয় ধারার উপন্যাসে যখন বাজার ছেয়ে গেছে তখনও নিভৃতচারী এ ঔপন্যাসিক রুচিশীল পাঠকের খোরাক যুগিয়ে যাচ্ছেন অনবরত। বাংলার মুসলিম শাসনের হাজার বছরের গৌরবগাঁথা তাঁর কলমে সাহিত্যের আঙ্গিকে নতুন ব্যঞ্জনা পেয়েছে। অকর্ষিত ও অচর্চিত একটি অঙ্গনকে বাংলা সাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে পৌঁছে দিলেও খ্যাতিমান এ লেখক এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ের কোনো পুরস্কারে ভূষিত হননি। তাঁর অপরাধ, তিনি ইসলামী ও শালীন ধারায় মুসলিম ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
প্রায় আশি বছরের বয়োবৃদ্ধ এই লেখকের কলম এখন আর আগের মতো স্বচ্ছন্দ ও সরব নয়। নানান রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি বড় ধরনের অপারেশনও হয়েছে। প্রিয় এই উপন্যাস নির্মাতাকে দেখা ও আর্থিক সহযোগিতার জন্য গত ৫ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত নির্বাহী সম্পাদকদের একটি প্রতিনিধি দল নাটোর গিয়েছিলেন। এ সময় লেখকের বাসভবনে তাঁর সাহিত্যকর্ম, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং ইসলামী ধারার লেখালেখির ভবিষ্যত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেই আলোচনার নির্বাচিত অংশ তুলে ধরেছেন প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্যÑজহির উদ্দিন বাবর
প্রশ্ন : আপনার লেখালেখির সূচনা কিভাবে?
উত্তর : আমি তখন রাজশাহীর বানেশ্বর কলেজের অধ্যক্ষ। রেডিও বাংলাদেশ থেকে নাটক লেখার প্রস্তাব আসল। আমি প্রথমে রেডিওর জন্য নাটক লেখা শুরু করি। আমার নাটকের বেশির ভাগ জুড়েই ছিল ইসলামী চেতনা। যেমন জাবালুত তারিক, সোহরাব-রুস্তম ইত্যাদি নাটকে সেই চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। তখন চিন্তা করলাম, নাটক থেকে বিষয়টাকে সাহিত্যে নিয়ে আসা যায়। সুতরাং আমি ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস রচনায় লেগে গেলাম। সর্বশেষ পাবনা এসডিও কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। সেখানে থাকাকালীনই অবসর নিই। ১৯৮৮ সাল থেকে আমার উপন্যাস লেখার সূচনা। একাধারে লিখেছি ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ২০০৯ সালে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিরামহীনভাবে প্রায় ২০ বছর লিখেছি। অসুস্থতা সত্ত্বেও এখনও কিছু কিছু লেখার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন : আপনি একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষ। ইসলামী ধারার লেখালেখিতে আসার অনুপ্রেরণা পেলেন কোথায়?
উত্তর : আমি যখন ছাত্র তখন পঞ্চাশ মাইলের ভেতরেও একজন আরবী-উর্দূ জানা লোক ছিল না। সবই ছিল হিন্দুদের করতলে। মুসলমানদের এই দৈন্যতাই আমাকে শিকড় সন্ধানী ঔপন্যাসিক হতে তাড়িত করে। এ ছাড়া আমার জীবনে পরিবর্তন আসার পেছনে একটা ঘটনাও আছে। আমি যাত্রা দলের সদস্য ছিলাম। হিন্দুদের সঙ্গে অনেক যাত্রাপালা করেছি। একবার এক যাত্রাপালায় এক হিন্দু জমিদার বাড়িতে গেলাম। সকালের নাস্তা দেয়ার সময় আমরা মুসলমান যে কয়জন ছিলাম একসঙ্গে বসলাম। সবাইকে কলাপাতা দেয়া হলো। রুটি, লুচি ও মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হচ্ছিল। হিন্দু ছেলেদেরকে দেয়ার সময় আস্তে আস্তে খুব সম্মানের সঙ্গে দিল। কিন্তু আমাদের মুসলিম ছেলেদেরকে দূর থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সঙ্গে নাস্তা পরিবেশন করতে লাগল। তাদের এই বৈষম্যমূলক আচরণ আমার মনে দাগ কেটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি নাস্তা ফেলে চলে আসি আর প্রতিজ্ঞা করি, জীবনে কোনোদিন হিন্দুদের সঙ্গে মিশব না। তখন থেকেই আমি ইসলামের ঐতিহ্য তুলে ধরার কাজে যোগ দিই।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত আপনার রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস কতটি?
উত্তর : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ পর্যন্ত ২২টি উপন্যাস লিখেছি। এক দুটি আছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে।
প্রশ্ন : নাসিম হিজাজীও ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস রচনা করেছেন। তার উপন্যাসের সঙ্গে আপনার উপন্যাসের মৌলিক পার্থক্য কোথায়?
উত্তর : নাসিম হিজাজীর উপন্যাসে ইতিহাসের ছাপটা একটু বেশি। সারা বিশ্বের ইতিহাস তিনি মন্তন করেছেন উপন্যাসের মাধ্যমে। কিন্তু প্রকৃত আঙ্গিকটা তার উপন্যাসে ব্যঞ্জনা পায়নি। পক্ষান্তরে আমি উপন্যাসের মূল আঙ্গিকটা অবলম্বন করে তাতে ইতিহাসের হালকা মিশেল ঘটিয়েছি। আরেকটা পার্থক্য হলো, নাসিম হিজাজীর উপন্যাসে সারা বিশ্বের ইতিহাস ব্যক্ত হয়েছে, আর আমি শুধু বাংলার ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ থাকার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন : এখন কী লিখছেন?
উত্তর : ঢাকার একটি প্রকাশনী ইসলামী এথিকসের ওপর একটি উপন্যাস চেয়েছে। আমাদের যুব সমাজ অন্য ধারার উপন্যাস পড়ে বিপথগামী হয়ে যায়। তারা যেন সামাজিক উপন্যাস পড়ে ইসলামী ভাবধারায় আসক্ত হয়, সেটাই এ উপন্যাসের উদ্দেশ্য। ‘প্রিয়তম’ নামের সে উপন্যাসটি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। উপন্যাসের প্লটটি এভাবে তৈরি করেছি যে, অনেকেই প্রিয় হওয়ার দাবী করে। কিন্তু কেউ যথার্থ অর্থে প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। অবশেষে যিনি নায়ক তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হনÑপ্রিয় অনেক আছে কিন্তু একমাত্র প্রিয়তম হচ্ছে আল্লাহ এবং তার রাসূল। এ দু’জনই ঈমানদার মুসলমানের একমাত্র প্রিয়।
প্রশ্ন : আপনার উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর : আমার উপন্যাস ইতিহাসের মিশেলে বিবরণ ও বক্তব্যধর্মী। উপন্যাসের যে মূল প্রাণÑরস ও স্বাদের মিশ্রণ তা বজায় রেখে প্রচ্ছন্নভাবে ইতিহাসের বিবরণ পেশ করেছি। আমি চেষ্টা করেছি পাঠককে নব-রসের সন্ধান দিতে। ইতিহাসের ধারা অক্ষুন্ন রেখে কল্পিত নায়ক-নায়িকার মাধ্যমে নীরস ঐতিহাসিক বর্ণনাকেই সুখপাঠ্য করে তোলার প্রয়াস চালিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার উপন্যাসে আরবী-ফারসী বেশ কিছু শব্দের ব্যবহার দেখা যায়?
উত্তর : হ্যাঁ, আমাদের ইসলামী সমাজে ব্যাপক প্রচলিত শব্দগুলোকে আমি অনায়াসে আমার উপন্যাসে ব্যবহার করেছি। এজন্য অনেক আরবী-ফারসী শব্দ এসেছে। এর মাধ্যমে আমি মুসলিম সমাজে ইসলামের একটা আবহ তৈরি করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন : আধুনিক ধারার তথাকথিত জনপ্রিয় উপন্যাসগুলো থেকে আপনার স্বাতন্ত্র কোথায়?
উত্তর : দুটি ধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটা ইসলাম বিদ্বেষী ধারা, আরেকটি ইসলামবান্ধব ধারা। আধুনিক ধারার উপন্যাসগুলো মূল্য উদ্দেশ্যই থাকে ইসলামের ওপর আঘাত করা। ইসলাম পরিপন্থী কালচার সমাজে ছড়িয়ে দেয়া। অবাধ যৌনাচারই তাদের উপন্যাসের মূল উপজীব্য। প্রেম-ভালোবাসার যথার্থ প্রয়োগও তাদের উপন্যাসে নেই। প্রেম মানেই শারীরিক সম্পর্ক কিংবা লিভ টুগেদার নয়। আমার উপন্যাসগুলোর উদ্দেশ্য হলো, ইসলামী ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করা। উপন্যাসের আদলে ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশই মূল টার্গেট।
প্রশ্ন : আপনি সরাসরি ইতিহাস রচনা না করে ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে গেলেন কেন?
উত্তর : প্রাচীন বাংলাদেশের মুসলিম শাসনামলের ইতিহাস বইপত্রে আমরা তেমন পাই না। ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা হলেও আমাদের এ ভূখণ্ডটির প্রসঙ্গ বরাবরই উপেক্ষিত ছিল। অথচ এখানকার একটা সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। আমি ইতিহাসের অনালোচিত এ অধ্যায়টি তুলে ধরতে চেয়েছি। যেহেতু রস-কষহীন ঐতিহাসিক বর্ণনায় পাঠকের আসক্তি কম এজন উপন্যাসের আঙ্গিকে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন : বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে আপনি প্রকাশকদের থেকে কেমন আচরণ পেয়েছেন?
উত্তর : ভালো-মন্দ দু’ধরনের আচরণই আমি প্রকাশকদের কাছ থেকে পেয়েছি। এ সম্পর্কে আমার অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোনো কোনো প্রকাশক বই প্রকাশ করেছে কিন্তু রয়্যালিটি দেয়নি। আপনাদের সুপরিচিত একটি প্রকাশনী আমার বেশ কিছু বই প্রকাশ করেছে। শোনা যায়, ওই প্রকাশনাটি রাবেতা আলমে ইসলামীর টাকায় প্রতিষ্ঠিত। ইসলামী ভাবধারার বই-পুস্তক প্রকাশনার কথা বলে রাবেতা থেকে মোটা অংকের টাকা এনেছে। কিন্তু সে প্রকাশনী আমার সঙ্গে খুব একটা ভালো আচরণ করেনি। আমার বই ছাপিয়ে অনেক টাকা লাভ করেছে। কিন্তু আমাকে টাকা দেয় কচলিয়ে কচলিয়েÑপ্রাপ্যের চেয়ে অনেক কম। তবে ভালো প্রকাশকও আছেন। প্রসিদ্ধ একটি প্রকাশনী আমার কয়েকটি বই ছেপেছে। তারা আমাকে নিয়মিত টাকা দিয়ে যাচ্ছে। আমার অসুস্থতার সময়ও তারা বেশ সহযোগিতা করেছে।
প্রশ্ন : আপনার কিছু কিছু উপন্যাসে অভিন্ন থিম পাওয়া যায়, যেমন মুসাফির, থার্ড পণ্ডিত, শীত বসন্তের গীত ইত্যাদি প্রায় কাছাকাছি থিমের ওপর। এর কারণ কী?
উত্তর : দেখুন, আমার এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় পঞ্চাশটি বই প্রকাশ পেয়েছে। একই নায়ক-নায়িকার নাম পর্যন্ত অজান্তে কোথাও কোথাও একাধিকবার চলে এসেছে। সম্প্রতি একটি উপন্যাসে নায়ক হিসেবে আমার নাতি আমীর রেজার নামটি ব্যবহার করব বলে মনস্থির করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম আরেকটি উপন্যাসে শরীফ রেজা নামে একজন নায়ক রয়েছে। সুতরাং এ সিদ্ধান্ত বাদ দিলাম। এতগুলো উপন্যাসের ভেতরে কাছাকাছি থিম চলে আসা বিচিত্র কিছু নয়। কাহিনীর প্রয়োজনেই আমি এমনটা করেছি।
প্রশ্ন : আপনার কোন উপন্যাসে আপনার জীবনের ছাপ রয়েছে?
উত্তর : ‘অপূর্ব অপেরা’ উপন্যাসে আমার জীবনের অনেকটা ছাপ পড়েছে। ভালোবাসার কথা মুখে বলতে হবে কেন, ভেতরে ভেতরে সমুদ্রের উত্তাল বয়ে যাবে। আমার জীবনেও এটাই ঘটেছে।
প্রশ্ন : আপন্যার উপন্যাসের প্লট নির্মাণে কোনো বিশেষ চরিত্রের আশ্রয় নিয়েছেন, নাকি অনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে চরিত্র নির্মাণ করেছেন?
উত্তর : আমি কাউকে অনুসরণ করে আমার উপন্যাসের জন্য বিশেষ কোনো চরিত্র নির্মাণ করিনি। কল্পনা থেকে তা নির্মাণ করেছি।
প্রশ্ন : ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলো রচনার ক্ষেত্রে ওই সময় সংশ্লিষ্ট ইতিহাস অধ্যয়ন করেছেন নাকি ইতিহাসের মৌলিক পড়াশুনা থেকেই তা রচনা করেছেন?
উত্তর : ‘বাংলাদেশের মুসলিম শাসন’ এবং মোহর আলী রচিত ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে বেশি উপকৃত হয়েছি। আর বাকীটুকু আমার ইতিহাসের মৌলিক পড়াশুনা।
প্রশ্ন : আপনার উপন্যাসে ভাষাগত প্রাচীনত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন সাধু-চলিতের মিশ্রণ, আরবী-উর্দূ শব্দের প্রচুর ব্যবহার ইত্যাদি। আধুনিক ধারার ভাষার সঙ্গে পরিচিতজনরা তা পড়তে আগ্রহী হয় না?
উত্তর : আমি ইসলামী ভাবধারায় ঋদ্ধ সাধারণ পাঠকদের জন্য উপন্যাস রচনা করি। সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত শব্দ আমার উপন্যাসে অধিকহারে স্থান পায়। ইসলামবিদ্বেষী তথাকথিত আধুনিক ধারার পাঠকদের কাছে আমার উপন্যাস ভালো না লাগারই কথা। আর আমি তাদের জন্য লিখিও না। তবে বর্তমানে আমি ‘প্রিয়তম’ নামে যে উপন্যাসটি লিখছি তাতে ভাষাগত দিক থেকে সময়ের আঙ্গিকটা অনুসরণের চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন : বাম ও ইসলামবিদ্বেষী ধারার সাহিত্যের বিপরীতে আমাদের করণীয়টা কী?
উত্তর : আপনাদের এ প্রশ্নের তাগিদ থেকেই আমি লেখালেখিতে এসেছি। অশ্লীল ও ইসলামবিদ্বেষী ধারার বিপরীতে উপন্যাসে শ্লীল ও ইসলামবান্ধব একটি ধারার সূচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। নিরেট ইসলামী নীতিকথা এবং ইতিহাসের নীরস বর্ণনার প্রতি পাঠকের আসক্তি কম। এজন্য চলমান ধারার সাহিত্যের বিপরীতে আমাদেরকে শালীন ধারার প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা এবং আনুসঙ্গিক নানান বিষয়ের মিশেলে কৌশলে উদ্দীষ্ট কথাটি ঢুকিয়ে দিতে হবে। এছাড়া আধুনিক সাহিত্যের অবাঞ্ছিত জোয়ার রোধ করা যাবে না।
প্রশ্ন : কোন ঔপন্যাসিকের উপন্যাস দ্বারা আপনি প্রভাবিত হয়েছেন?
উত্তর : শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের দ্বারা আমি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছি। মুসলিম চরিত্রগুলোকে হেয় ও নীচু করা ছাড়া তার উপন্যাসের প্রতিটি বিষয়ই আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। শরৎচন্দ্র যদি শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পড়তেন, আমি তার পায়ের ধূলি নিতেও প্রস্তুত থাকতাম। সামাজিক উপন্যাসে তার কোনো নজীর আজ পর্যন্ত পাইনি। আমাদের মুসলিম লেখকদের রচিত আনোয়ারা, মনোয়ারা, প্রেমের সমাধী, জোহরা ইত্যাদি সামাজিক উপন্যাসেও আমি কিছুটা প্রভাবিত হয়েছি।
প্রশ্ন : উপন্যাসের মাধ্যমে আপনি বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করেছেন। অনেকগুলো শক্তিশালী উপন্যাস প্রকাশিতও হয়েছে। আমরা দেখি সাধারণত এতটুকু অবদানের জন্যই লেখক-সাহিত্যিকেরা জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়। কিন্তু আপনি এখনও জাতীয় পর্যায়ের কোনো পুরস্কার পাননি। এই না পাওয়ার কারণ কী? এর জন্য কি আপনার ভেতরে কোনো খেদ আছে?
উত্তর : আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ধারাটি যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা ইসলাম বিদ্বেষী। ইসলামী ভাবধারার কোনো লেখক যত শক্তিশালীই হোক তাকে মূল্যায়ন করতে তারা প্রস্তুত নয়। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, মূলত ইসলামবিদ্বেষী চক্রটিই এ ধারাটি নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং আমার মতো ইসলামপন্থী লেখক পুরস্কৃত না হওয়াটাই স্বাভাবিক। দু’একবার আমার জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে, কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। যেহেতু আমি আগে থেকেই জানি ইসলামকেন্দ্রিক লেখালেখির জন্য পুরস্কার পাব না, সুতরাং আমার ভেতরে কোনো খেদ নেই। আমি লিখি ইসলামের জন্য। এর প্রতিদান আল্লাহ আমাকে দিবেনÑএটাই আমার বিশ্বাস।
প্রশ্ন : আপনি বাংলা উপন্যাসে যে নতুন ধারার সূচনা করেছেন এর ভবিষ্যত কী?
উত্তর : আমি মহামানব নই, মহামানবের মতো কথা বলতে চাই না। তবে কুরআন-হাদীসের এ ওয়ারিস যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কুদরতীভাবেই এমন ব্যক্তি তৈরি হয়ে যাবেন যার কলমে ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্য নতুন ব্যঞ্জনা পাবে।
প্রশ্ন : আপনার নির্ণিত পথ ধরে যারা লেখালেখি করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : যখন আপনার লেখা পাঠককে আকর্ষণ করবে তখনই প্রকাশকরা আপনার প্রতি ঝুঁকবে। এজন্য লেখাতে প্রেম-প্রীতি, রঙ্গ-রস, হাসি-কান্না, মিলন-বিরহ সবকিছুর পরিমিত মিশেল থাকতে হবে। যে কোনো পাঠক যেন আপনার লেখা পড়ে স্বাদ অনুভব করেÑসে প্রচেষ্টা আপনার মধ্যে থাকা উচিত।

*

*

Top