বেঁচে থাকুক স্বপ্নেরা

Imageমানুষ স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্ন বিকশিত করতে চায় সবাই। এই স্বপ্নের শুরুটা শিশুকালে। বয়স ১৮ হওয়ার আগপর্যন্ত সময়টা শিশুকাল। স্বপ্নের দানাটাও বাঁধে এ সময়টাতেই। তাই শিশুকালটা অতি গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ বড় হয়ে কী হবে-সেটা তার শিশুকালের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। শিশুদের বলা হয় জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের হাতেই নির্মিত হবে স্বপ্নের আগামী। তারা নিজেরা যেমন গড়ে উঠবে মনের মতো, তেমনি সাজাবে দেশ ও জাতিকে। আজকে যারা শিশু তারাই আগামীর কা-ারী। তাই তাদের প্রতি চোখ পুরো জাতির।

কিন্তু আজকের শিশুরা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বপ্নের জগৎ থেকে। যেভাবে বেড়ে ওঠার কথা সেভাবে তারা বেড়ে ওঠছে না। স্বপ্ন বুননের এই সময়টাতে তারা স্বপ্নভঙ্গের মহড়া দিচ্ছে। আলোর আভা না ছড়িয়ে তারা পথ হারাচ্ছে অন্ধকারে। ফুলের মতো ¯িœগ্ধ জীবনটাতে ফোটাচ্ছে অসংখ্য হুল। জীবনের রাজপথ ছেড়ে তারা মুখ লুকাচ্ছে অন্ধকার গলিতে। জীবনের অমূল্য মুহূর্তগুলো যাচ্ছে তাদের বিফলে। স্বপ্ন দেখার কথা ভুলে গেছে আজকের শিশুরা। নিজেকে গড়ার কোনো প্রস্তুতিও নেই তাদের মাঝে।

শিশুরা কেন আজ স্বপ্নহীন, বিপথের যাত্রী? এর জন্য দায়ী আমাদের সমাজ, আমরা। যেভাবে বেড়ে উঠলে একটি শিশু স্বপ্নকে ছুঁতে পারে সেভাবে বাড়ার মতো সুযোগ আমরা করে দিতে পারিনি। আমাদের সমাজ পারেনি। সমাজের সবখানে আজ ক্ষতের চিহ্ন। এর কোথাও নেই শিশুদের আশ্রয়ের মতো কোনো জায়গা। যাচ্ছেতাইভাবে বড় হচ্ছে শিশুরা। অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠার কারণে সমাজের প্রতি কোনো দায়বোধ জন্মাচ্ছে না তাদের মধ্যে। দেশ-জাতির প্রতি কোনো টানও তারা অনুভব করছে না।

শিশুদের স্বপ্নগুলো আজ কেড়ে নিচ্ছে মাদক। তাদের বড় হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নানা নেশা। যে বয়সে নিষ্কলুষ থাকার কথা সে বয়সেই তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। শিশু-কিশোর-তরুণদের বেশির ভাগই আজ কোনো না কোনো অন্যায় কাজে জড়িত। কোন পরিণতির দিকে তারা যাচ্ছে-এটা তাদের জানা নেই। ডানাওয়ালা স্বপ্নগুলো কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে সেটা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনাও নেই। ‘খাও-দাও, ফূর্তি করো’ এই নীতিতে চলছে শিশুরা। বাজে স্বভাবগুলো দিন দিন তাদের মধ্যে পাকাপোক্তভাবে দানা বাঁধছে। বিপথে যেভাবে ছুটে চলেছে ভবিষ্যতের এই কা-ারীরা-তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
শিশুরা কেন বিপথে-এ প্রশ্ন আজ সবার। তবে যে শিশুর মধ্যে নৈতিক শিক্ষার কোনো বালাই নেই সেই শিশু তো বিপথগামী হবেই। পারিবারিক শিক্ষার আলো নেই যার মধ্যে সে তো অন্ধকারে পথ হারাবেই। বেড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে শিশু স্বপ্ন পোষবে কিভাবে! সমাজের অনাদর-অবহেলায় তো শিশুদের মধ্যে নির্মমতা জন্মাবেই। হাতে-কলমে না শেখালে শিশু শিখবে কোথায় থেকে! রাষ্ট্র ও সমাজ শিশুর কথা না ভাবলে তারা তো বিদ্রোহী হবেই। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ভারসাম্য যে পরিবেশ দরকার সেটা তো আমরা দিতে পারিনি। দেশ ও জাতিকে নিয়ে স্বপ্ন বোনার প্রেরণা তো তারা আমাদের কাছ থেকে পায়নি।

শিশুদের এই অনিয়ন্ত্রিত ভবিষ্যতের জন্য দায়ী আমরা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কেউই এই দায় এড়াতে পারে না। কোমলমতি শিশুদের মনে নৈতিক ও ইসলামী শিক্ষার বীজ অঙ্কুরিত করলে অবক্ষয়ের এ চিত্র দেখতে হতো না। তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কথা ভাবলে করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতো না তারা। সামাজিক বন্ধন যত দুর্বল হচ্ছে শিশু-কিশোররা ততই বিপথে যাচ্ছে। শিক্ষা থেকে নৈতিকতা ও ধর্মীয় ছাপ যত মুছে যাচ্ছে ততই শিশুদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। অভিভাবকরা যত দ্বীন-ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে শিশুদের মধ্যেও ততই বিকৃতি ঘটছে। বড়রা ঠিক না হলে ছোটদের ভালো হওয়ার আশা করা যায় না। আমাদের সমাজব্যবস্থায় আজ ঘুণে ধরেছে। শিশু-যুবক-বৃদ্ধ কেউই এর ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারছে না।

অভিভাবকরা এতটাই ব্যস্ত যে, তার আদরের সন্তানটি কোন অন্ধকার গলি দিয়ে পথ চলছে সে খবর নেই। আধুনিক প্রযুক্তি তার শিশুসন্তানটিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কেও জানেন না। শিশু-কিশোররা কাদের সঙ্গে মিশছে সেটা দেখার প্রয়োজনও তারা বোধ করেন না। শিশুদের শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশও যে প্রয়োজন সে কথা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও শিশুদের পুরোপুরি উপযোগী নয়। শহুরে জীবনে শিশুরা সামাজিক শিক্ষাটা সেভাবে পাচ্ছে না। গ্রাম্য জীবনে সামাজিক বন্ধন কিছুটা আছে, কিন্তু শিশুর উন্নতি ও বিকাশে অনেক কিছুর অভাব রয়েছে। দারিদ্র্যের কারণেও শিশুদের বড় একটি অংশ পথ হারায়। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একটি বড় অংশ অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে।

বিপথগামী শিশুর মিছিল দিন দিন বড় হচ্ছে। আশা-ভালোবাসার আদরের শিশুরা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের ভুবন থেকে। তাদের এই পথহারানো দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত। অবক্ষয়ের পথ থেকে শিশুদের এখনই রক্ষা করা না গেলে পরিণতি ভয়াবহ। তাই নিজেদের স্বার্থেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে স্বপ্নগুলো। শিশুর বেড়ে ওঠার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে আমাদেরই। সমাজের যে চোরাগলিগুলো শিশুদের বিপথে টেনে নেয় সেগুলো বন্ধ করার দায়িত্ব বড়দের। অভিভাবকরা চোখ-কান খোলা রাখলে জাতির স্বপ্নগুলো হারিয়ে যাবে না।

2 Comments

  1. সাইফ said:

    শিশুদের নিয়ে আপনার ভাবনাগুলো সবার অনুভব ছুঁয়ে যাক।

*

*

Top