ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী এমন অনেকেই ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন। ফেসবুক ওপেন করলেই তাদের স্ট্যাটাসগুলো না চাইলেও চোখের সামনে চলে আসে। বিশেষ কোনো দলের প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ আমার নেই। তবে সব দলের নেতাকর্মীর সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। যারা যে অবস্থানে থেকে কাজ করছেন আমি সবার কাজকে মূল্যায়ন করি। সবাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন সেটাও বিশ্বাস করি। কিন্তু কিছু কিছু ইসলামি দলের কর্মীদের পারস্পরিক কাঁদা ছোড়াছুড়ি দেখলে হতাশ হই। একদলের কর্মী আরেক দলের কর্মী-সমর্থকদের যে ভাষায় আক্রমণ করছেন তা দেখে ভাবতে কষ্ট লাগে তারাই এদেশে ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়ন করবে!
রাজনীতিতে মতপার্থক্য ও চিন্তার বৈচিত্র্য থাকবেই। সবাই একই দলের অনুসারী হতে হবে এটাও জরুরি নয়। তবে যারা তথাকথিত ইসলামি রাজনীতি করেন গতানুগতিক রাজনীতিকদের থেকে তাদের একটু ভিন্নতা থাকা চাই। কারণ ইসলামের নামে যারা রাজনীতি করেন তাদের সবার টার্গেট দ্বীন প্রতিষ্ঠা। প্রত্যেক দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে সেটাই সবার মনে করা উচিত। কিন্তু আমাদের ইসলামি দলগুলোর কর্মী-অনুসারীরা কি সেটা মনে করেন? ‘আমি যে দল করি সেটাই সেরা, অন্যেরা কিছুই না’ এই মনোভাব সবার ভেতরে কাজ করে। আর সেই মনোভাব প্রকাশ ঘটে তাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে।
আগে ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও শ্রদ্ধা-ভালোবাসার জায়গাটা অনেক সবল ছিল। মতপার্থক্য ও নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল; কিন্তু তারা অপর ইসলামি দলগুলোকে নিজেদের শত্রু মনে করতেন না। এজন্য দ্বীনের স্বার্থে যেকোনো সময় তারা একসঙ্গে, একমঞ্চে সমবেত হতে পারতেন। কিন্তু এখন দিন দিন সেই সম্পর্ক ও শ্রদ্ধা-ভালোবাসার জায়গাটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। নতুন গজিয়ে ওঠা অতি উৎসাহী কিছু নেতাকর্মী অপর দল সম্পর্কে যাচ্ছেতাই মন্তব্য করছে। সামান্য একজন কর্মী-সমর্থক অপর দলের শীর্ষ নেতা সম্পর্কে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও কটূক্তি করে বসছে যা কোনো সুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে না।
সম্প্রতি ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক বিভেদ ও কাঁদা ছোড়াছুড়ির অবারিত প্রান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। ইসলামি দলগুলোর কথিত কর্মীরা এটাকে ‘জিহাদের’ নতুন ক্ষেত্র বানিয়ে নিয়েছে। তারা ফেসবুকে পরস্পরে ঝগড়া ও বিতর্কে লিপ্ত হয়ে যে এনার্জিটুকু ব্যয় করে সেটা ইসলামি আন্দোলনের স্বীকৃতি ধারায় ব্যয় করলে এদেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। ভাবতে অবাক লাগে, ঐতিহ্যবাহী ইসলাামি দলগুলোর পক্ষে হাতেগোনা কয়েকজন ইচড়েপাকা, বেয়াদব ও দুষ্ট প্রকৃতির কর্মী ‘ফেসবুক জিহাদে’ লিপ্ত হয়ে নিজের দল ও নেতাদের কলুষিত করছে; কিন্তু এ ব্যাপারে ওই দলগুলোর কোনোই মাথাব্যথা নেই। অনেকে এই ইতরপ্রকৃতির ফেসবুকারদের উস্কিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এটা ভাবছে না, আমার দলের একজন কর্মী অন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে গালি বা কটূক্তি করলে তাদের দলের কর্মী-সমর্থকরা কি চুপ হয়ে বসে থাকবে? এভাবে ইসলামি দলগুলো তাদের দলের মহীরুহতুল্য নেতাদের গালি খাওয়াচ্ছেন।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হলো, নতুন প্রজন্মের মধ্যে বড়দের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ থাকার কথা সেটা আর থাকছে না। কথিত ইসলামি দলগুলো তাদের কর্মীদের দীক্ষা দিচ্ছে, ‘আমাদের দলের নেতাই মহান; তার চেয়ে ভালো লোক আর দুনিয়াতে ছিলেন না। অন্য দলের নেতারা কিছুই নন।’ এভাবে ইসলামি দলগুলো খ-িত ও বিচ্ছিন্ন ভাবনায় বিভোর হয়ে নিজেদের অমিত সম্ভাবনাকে তিলে তিলে গলাটিপে হত্যা করছে।
গেন্ডারিয়া, ঢাকা
১৭.০৩.২০১৬