৩ অক্টোবর ২০১৪ শুক্রবার পালিত হলো মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র হজ। সৌদি আরবের মক্কা নগরীর কাছে ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে সেদিন জড়ো হয়েছিলেন ৩০ লক্ষাধিক মুসলমান। উপস্থিত জনতাকে লক্ষ্য করে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ মসজিদে নামিরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক খুতবা দেন। ধারাবাহিকভাবে ৩৪ বছর ধরে তিনি হজের খুতবা দিয়ে আসছেন। এবারের খুতবায় তিনি মুসলমানদের প্রতি হৃদয়গ্রাহী নসিহত পেশ করেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের সংকট ও উত্তরণের পথও তিনি তার খুতবায় তুলে ধরেন। হজের সেই খুতবার সারকথা এখানে উল্লেখ করা হলো।
মুসলমানদের উচিত নিজেদের কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজেকে লাগামহীন মনে না করা। আল্লাহ কোরআনে কারিমে তার একত্মবাদের কথা স্পষ্ট করে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন দ্বীনের ওপর ইখলাসের সঙ্গে আমল করতে। রাসুল্লাহর ওপর যে শরিয়ত অবতীর্ণ হয়েছে তা অতি সত্য। এর ওপর আমল করা ছাড়া কারো কোনো গত্যান্তর নেই। আজ মুসলিম উম্মাহ একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। চার দিক থেকে মুসলমানদের ওপর পতিত হচ্ছে সমস্যা ও সংকট। দিকে দিকে আজ মুসলমানদের দুর্দিন। এর একমাত্র কারণ ইসলামের শিক্ষা থেকে মুসলমানরা দূরে সরে পড়েছে। আমরা আজ আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজছি শত্রুদের কাছে। তাদেরকেই নিজেদের আপন বলে ভাবছি। এটা আমাদের অনেক বড় ভুল। সবার উচিত এই ভুল থেকে ফিরে আসা।
শয়তান মানুষকে বিপথগামী করার সব চেষ্টাই অব্যাহত রাখে। শয়তান চায় আমরা যেন ইসলামের পথ ছেড়ে বিপথে পা বাড়াই। অমুসলিমরা ইসলামি দেশ ও সা¤্রাজ্য ধ্বংস করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুসলমানদের উচিত দ্বীনের ওপর অবিচল থাকা। সবকিছুর ওপর দ্বীনকে প্রাধান্য দেয়া। নবী করিম সা.-এর আদর্শের ওপর আমল করা। মুসলিম বিশ্বের মিডিয়ার উচিত তাদের দায়দায়িত্ব যথাযথভাবে আঞ্জাম দেয়া। কাউকে হত্যা করা ভয়াবহ গোনাহের কাজ। সমাজে যাতে খুন-খারাবি না ঘটে সে দিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। প্রত্যেক সরকারের উচিত জনসাধারণের সংকট ও দুর্দশায় তাদের পাশে দাঁড়ানো। বিপদের সময় সহযোগিতার হাত বাড়ানো। ইসলাম সরকারের আনুগত্যের নির্দেশও দিয়েছে। তবে শাসকদের এ কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, তাদেরও একদিন আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে। এজন্য শাসকদের উচিত সমাজ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিধান করা। জনসাধারণের সঙ্গে যেকোনো আচরণের সময় শাসকদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহ জুলুম থেকে বাঁচার জন্য কড়াভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটের মতো সমস্যাগুলো পরস্পরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। আভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের পলিসির দিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে। ইসলাম উন্নত চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেয়। মুসলমানদের এত্মবাদ ও ভ্রাতৃত্ব কখনও ছাড়া উচিত নয়। সম্পদ উপার্জন করতে হবে বৈধ পন্থায় এবং তা খরচও করতে হবে বৈধভাবে। জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সমাজবিধ্বংসী সুদ নির্মূল করতে হবে। মুসলমানদের সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষার ব্যাপারে সবাইকে ভাবতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ ও দীক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। চরমপন্থা ইসলামে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন অপরজনকে হত্যা করা সবচেয়ে বড় ফেতনা। আর কোরআনে ফেতনাকে হারাম করা হয়েছে। মুসলমানদের কোনো ফেতনা ও পারস্পরিক সংঘাতে জড়ানোর অবকাশ নেই।
ইসলামে সবধরনের অশ্লীলতা ও নগ্নতাকে হারাম বলে গণ্য করা হয়েছে। আল্লাহর কাছে তিনিই শ্রেয় যিনি মুত্তাকি বা পরহেজগার। যেকোনো নেশা মানুষের আমলকে ধ্বংস করে দেয়। নেশাগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে প্রাণীর তেমন কোনো প্রার্থক্য নেই। মুসলমানদের উচিত নেশা ও মাদক থেকে দূরে থাকা। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল জীবন গঠনের সর্বাত্মক চেষ্টা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব।