তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা যোবায়েরুল হাসান রহ.

Image‘আয় আল্লাহ হামকো মাফ ফরমা, হামারে দোয়াউকো কবুল ফরমা’_ টঙ্গীর তুরাগতীরে ভরাট কণ্ঠে হৃদয়ভেজা এমন দোয়া আর শোনা যাবে না। বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে তিনি আর কখনও লাখ লাখ মুসলি্ল নিয়ে হাত তুলবেন না। মোনাজাতের আগে দ্বীনের পথে গমনকারীদের উদ্দেশে আর হেদায়াতি ভাষণও তিনি দেবেন না। তিনি হজরত মাওলানা যোবায়েরুল হাসান (রহ.)। বিশ্ব তাবলিগ জামাতের অন্যতম নীতিনির্ধারক। ভারতের নিজামুদ্দীন মারকাজের শূরার অন্যতম শীর্ষ সদস্য। তাবলিগ জামাতের একক কোনো আমির না থাকলেও তাকেই শীর্ষ মুরবি্ব হিসেবে মানতেন সবাই।

১৮ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় দিলি্লর ড. রাম মানোহার লুহিয়া হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার বাদ এশা তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নিজামুদ্দীনের পানি পিরান কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন এই দ্বীন প্রচারক। তিন ছেলে, তিন মেয়ে এবং স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান তিনি।

মাওলানা যোবায়েরুল হাসান কান্ধলবীর বাবা তাবলিগ জামাতের তৃতীয় আমির মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.)। পারিবারিকভাবেই তিনি দাওয়াতি কাজের প্রেরণা লাভ করেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন আল্লাহর পথের পথিক। দাওয়াতি কাজই ছিল তার মূল মিশন। মাওলানা যোবায়েরুল হাসানের জন্ম ১৯৫০ সালের ৩০ মার্চ। প্রাথমিক পড়াশোনা পিতা মাওলানা এনামুল হাসানের কাছে সম্পন্ন করেন। ১৯৭১ সালে ভারতের প্রখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামেয়া মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুর থেকে তিনি পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি শিক্ষাদান ও দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট শুক্রবার সর্বপ্রথম মাদ্রাসায়ে কাদিমের মসজিদে তাবলিগ জামাতের সঙ্গীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এরপর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত জড়িত ছিলেন নবীওয়ালা এই কাজের সঙ্গে। তাবলিগি কাজের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক লাইনেও কাজ করেছেন মাওলানা যোবায়েরুল হাসান (রহ.)। পড়াশোনা শেষ করেই তিনি শায়খুল হাদিস জাকারিয়ার (রহ.) কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮ সালে তিনি খেলাফত লাভ করেন।

বাংলাদেশের মুসলমানদের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক ছিল মাওলানা যোবায়েরুল হাসানের। প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমায় তিনি নিয়মিত আসতেন। ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতেন তিনি। মোনাজাতের আগে তাবলিগের ছয় উসুলের ওপর হেদায়াতি বয়ানও করতেন তিনি। তার দরাজ কণ্ঠ, আবেগময় ভাষা এবং সাবলীল উপস্থাপনায় আখেরি মোনাজাত অন্য রকম এক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করত। তার দোয়ার কারণে হৃদয়ভেজা কান্না আর আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হতো তুরাগতীর। এ জন্য তার ইন্তেকালে শোকগ্রস্ত হয়েছেন এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। প্রধানমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাবলিগ জামাত সংশ্লিষ্টরা তার ইন্তেকালে একজন দরদি অভিভাবককে হারিয়েছেন। আল্লাহ তার কবরকে নূর দিয়ে ভরপুর করে দিন।

*

*

Top