জহির উদ্দিন বাবর
এই সময়ে লেখালেখির অঙ্গনে তরুণরা যাদের আইডল ভাবে তাদের অন্যতম তিনি। সমসাময়িকদের মধ্যে সবচেয়ে সরব লেখকও তিনি। ‘দু’ হাতে লিখেন’ কথাটির যথার্থ প্রয়োগ হয় তাঁর ক্ষেত্রে। অনেকে অধিক পরিমাণে লিখলে মানের ব্যাপারে ততটা নজর দিতে পারেন না। কিন্তু মাওলানা যাইনুল আবিদীন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি মানের ব্যাপারে কখনোই আপস করেন না। তাঁর সব লেখায় পাঠক শক্তিশালী একজন গদ্যকারকে খুঁজে পান। বাছাই করা প্রতিটি শব্দের সুপ্রয়োগের কারণে পাঠকের কাছে তাঁর গদ্যটা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও সুখকর। প্রসাদগুণসমৃদ্ধ এই গদ্যের স্বাদ পাওয়ার পর পাঠক তাঁকে খুঁজে বেড়ায়। এজন্য আমরা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি কাটতি লেখকদের তালিকায়ও তাঁকে শীর্ষে দেখতে পাই।
একজন মানুষ তার নিজের জীবনকে যতটা উপলব্ধি করেন সেটা আর কারও দ্বারা সম্ভব নয়। এজন্য নিজের সম্পর্কে নিজে বলার মধ্যে যে বস্তুনিষ্ঠতা ও যথার্থতা থাকে সেটা অন্যের দ্বারা কখনও হয়ে ওঠে না। এ কারণেই সাধারণ জীবনীগ্রন্থের চেয়ে আত্মজৈবনিক গ্রন্থগুলো বেশি সমাদৃত, পাঠকের কাছে বেশি আদরনীয়। শক্তিমান গদ্যশিল্পী মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীনের আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকারকে মলাটবন্ধ করার উদ্যোগ শুধু প্রশংসনীয়ই নয়, সময়োপযোগী একটি কাজ।
বিগত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে কওমি অঙ্গন থেকে উঠে আসা একজন পোড় খাওয়া লেখক তিনি। আদর্শের জায়গাটিতে তিনি সটান দাঁড়িয়ে থাকা সৌধের মতো। বিপরীতমুখি কোনো স্রোতধারাই তাঁকে সেই জায়গাটি থেকে টলাতে পারেনি। দিনশেষে তিনি একজন আদর্শবাদী, বিশ্বাসী ও পাক্কা মুসলমান। কথিত আধুনিক ধারার শিল্প-সাহিত্যের নষ্টামির বিপরীতে তাঁকে একজন বিপ্লবী কলমযোদ্ধা হিসেবে আমরা আবিষ্কার করি। প্রায় তিন যুগের প্রচেষ্টায় তিনি এখন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে তা পরবর্তীদের জন্য অনেক বেশি অনুপ্রেরণার। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তিনি যে ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করেছেন, যে প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়েছেন সেইসব গল্প অনুজদের জন্য এগিয়ে যাওয়ার বড় পাথেয়। আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে তিনি তরুণদের জন্য সেই পাথেয়ই যোগালেন।
মাওলানা যাইনুল আবিদীনের সবচেয়ে বড় গুণটি হলো তিনি তরুণদের নিয়ে অনেক বেশি ভাবেন। সম্ভাবনাময় তরুণদের জন্য তাঁর দুয়ার সবসময় খোলা। অবারিতভাবে সময় দেন, পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তারুণ্যের চিন্তা, আদর্শ ও বিশ্বাসের জায়গাটি বলিষ্ঠ করার জন্য তিনি প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে অসংখ্য তরুণ আদর্শিক পথ ধরে এগিয়ে চলছে। তাঁর এই উদারতা ও কল্যাণকামিতা তারুণ্যের জন্য অনেক বড় পাওনা।
মাওলানা যাইনুল আবিদীনের জীবনের গল্পগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরার মূল কৃতিত্ব আমাদের প্রিয় অনুজ আমিন ইকবালের। তার নিরলস চেষ্টা ও উদ্যমতা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এই বইটির মধ্য দিয়ে পাঠক তাদের প্রিয় লেখকের জীবনের নানা অজানা অধ্যায় সম্পর্কে যেমন জানতে পারবে তেমনি নিজেদের গঠন করার খোরাকও পাবে। শুভকামনা লেখক, সংকলক ও প্রকাশক সবার জন্য।