ফেসবুক সেলিব্রেটিদের বলছি…

জহির উদ্দিন বাবর

facebook_zahirbabor-comঅনেক দিন পর একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ। ফেসবুকে মোটামুটি জনপ্রিয়।

বললেন, আপনি এখন কোথায় লেখালেখি করছেন?

বললাম, এইতো সুযোগ পেলে পত্রপত্রিকায় টুকটাক লেখি। বইপত্রের কিছু কাজ আছে, চলছে ঢিমেতালে।

বললেন, পত্রিকায় লিখে লাভ কী? আর বই কি এখন কেউ পড়ে?

আমি বললাম, তাহলে কোথায় লিখবো?

তিনি বললেন, কেন ফেসবুকে লিখবেন, তাহলে সহজেই জনপ্রিয় হতে পারবেন।

বললাম, ভাই এতো জনপ্রিয়তা আমি চাই না। টুকটাক লেখালেখির সঙ্গে জড়িত থাকতে চাই। এতেই সন্তুষ্ট। বই আর পত্রিকা যারা পড়ে তারা মনে চাইলে আমার লেখা পড়বে, মনে না চাইলে পড়বে না। এতে আমার কোনো খেদ নেই।

এরপর ফেসবুকের ‘ফজিলত’ বলে গেলেন একাধারে। তার কোন স্ট্যাটাসে কতটা লাইক, কতটা কমেন্ট পড়েছে সে বর্ণনা দিলেন। মুগ্ধ হয়ে শুনলাম। বললাম, তাহলে তো আপনি এখন ফেসবুক সেলিব্রেটি। বললেন, তা বলতে পারেন। কারণ ফেসবুক ছাড়া এখন ‘মূল ধারায়’ টিকে থাকা কঠিন। আমাকেও পরামর্শ দিলেন, ফেসবুকে যেন সরব থাকি। চেষ্টা করবো বলে তাকে আশ্বাস দিলাম। তিনি চলে গেলেন।

…………………………

তিনি মোটামুটি ভালো লিখতে পারেন। কমবেশি লিখেছেনও। সম্পাদনাও করেন। এখন তিনি ফেসবুক সেলিব্রেটি। প্রায় প্রতিদিনই বিপ্লবী পোস্ট দেন। শত শত লাইক কমেন্ট পড়ে। সরাসরি তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। সেদিন একজন জানালেন, ওই ফেসবুক সেলিব্রেটির বক্তব্য হলো এখন আর বইপত্র ও পত্রপত্রিকায় লিখে লাভ নেই। কারণ নতুন প্রজন্ম এখন ফেসবুকমুখি। ফেসবুকে কিছু লিখলে মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। সবার মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। কে কী লিখলো তা ফেসবুকের বাইরের লোকদের মধ্যেও আলোচনা হয়। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, দেখেন না কওমি মাদরাসা স্বীকৃতি নিয়ে কে কী লিখেছে সেটা মুরব্বিরাও জানেন। অনুসারীদের মাধ্যমে মুরব্বিদের কানেও সে খবর চলে গেছে।

…………………………………….

কথিত ফেসবুক সেলিব্রেটিদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, এতো শ্রম ও মেধা খাটিয়ে যে ‘মহামূল্যবান’ লেখাগুলো লিখছেন সেগুলো কি সংরক্ষিত থাকছে? মাস-দুয়েক আগে যে লেখাটি লিখেছিলেন সেটা প্রয়োজনের মুহূর্তে খুঁজে পাবেন? বছরখানেক আগে জাতিকে যে জ্ঞান বিলিয়েছিলেন সেটার অস্তিত্ব কি এখন আছে? হ্যাঁ, সস্তা লাইক, তেলমারা কমেন্ট, আবেগি পাবলিকের বাহবাহ দেখে আপনি গদগদ। ভাবছেন, যুগের ইমাম গাজালী আর থানভী হয়ে গেছেন। মনে রাখবেন, ফেসবুকে যে জ্ঞান দিচ্ছেন সেটা স্থায়ী কোনো কাজ নয়। ভার-ভারিক্কি আছে এমন কোনো মানুষের জন্য এটা শোভনীয়ও না। ফেসবুকে লিখে উত্তেজনা ছড়ানো সাময়িক সস্তা আবেগের স্ফূরণ মাত্র।

আপনি ভালো লিখেন, আপনার কলমে ধার আছে, সেটা দিয়ে স্থায়ী কিছু কাজ করে যান। স্থায়িত্ব আছেন এমন গঠনমূলক কিছু লেখার চেষ্টা করুন। জাতি আপনাকে মূল্যায়ন করবে। ফেসবুকে উত্তেজনা ছড়িয়ে নিজেদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে একটি তেলমারা শ্রেণির বাহবা কুড়াচ্ছেন সত্য, কিন্তু ইতিহাসের মূল্যায়ন বলে দেবে আপনার অবস্থান কোথায়।

…………………

পুরানা পল্টন

২ নভেম্বর ২০১৬

Related posts

*

*

Top