অসভ্যতা ও বর্বরতার মাত্রা যেখানে শেষ অভিশপ্ত ইসরাইলিদের হিংস্রতা সেখান থেকে শুরু। মানুষরূপী হায়েনা কত বর্বর হতে পারে ইহুদিদের না দেখলে বিশ্ববাসী তা অনুমান করতে পারতো না। পৃথিবীর তাবৎ ঘৃণা ছোট্ট ভূখ- ইসরাইলের দিকে ছুড়ে মারলেও তাদের অসভ্যতার তুলনায় তা সামান্যই হবে। তাদের অপকর্ম চিত্রায়নে কলমের ভাষা অক্ষম। এমন অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানোর কোনো ভাষা পৃথিবীতে আজও সৃষ্টি হয়নি। গত দেড়-দুই মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় বর্বর ইহুদিরা যে তাণ্ডব ও হিস্রতা চালাচ্ছে তা ভাষায় ফুটিয়ে তোলার মতো নয়। গাজায় মানবতা ডুকরে কেঁদেছে। প্রকৃত অর্থেই কান্নায় ভারী হয়ে ওঠেছে সেখানকার আকাশ-বাতাস। মানুষরূপী হায়েনার ভয়াবহ চিত্র গাজাবাসী যেভাবে সরাসরি দেখেছে তা পৃথিবীর অন্য ভূখণ্ডের মানুষেরা কল্পনাও করতে পারবে না। আতঙ্কের নগরী গাজার বাতাসে এখনো লাশের গন্ধ। সেখানকার অধিবাসীদের চোখে-মুখে আতঙ্কের যে ছাপ তা কাটতে লাগবে আরো অনেক দিন। প্রিয়জনের সারি সারি লাশের দৃশ্য গাজাবাসীকে কাঁদাবে বহুকাল। এখনও থেমে নেই সেই বর্বরতা। প্রতিদিনই ঝরছে অগণিত মানুষের প্রাণ। ইসরাইলিদের নৃশংসতার শিকার কখন যে কে হবেন তা কেউ জানেন না। নবী-রাসূলের স্মৃতিধন্য ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে একতরফা হত্যা ও নির্যাতন অব্যাহত আছে। এটাকে শতবর্ষের অন্যতম বড় গণহত্যা বলা চলে। ইসরাইলের মানবতাবিধ্বংসী এই ঘৃণ্য কর্মকা- কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না।
গাজা উপত্যকায় মানবতার বোবা কান্না বিশ্ববাসী দেখেছে। তবে সেখানকার অবুঝ শিশুর গগনবিদারী আর্তনাদ কারো কান স্পর্শ করেনি। পরিকল্পিতভাবে গণহত্যায় টার্গেট করা হয়েছে শিশুদের যাতে কেউ মুক্তিসেনা না হয়। ইসরাইলি দানবের বুলেটে ঝাঁজরা হয়েছে কত যে শিশু-বৃদ্ধ ও নারীর বুক তার কোনো হিসাব নেই। এই দানবদের হিং¯্রতা কোনো সভ্য সমাজের মানুষ মেনে নিতে পারে না। কিন্তু তবুও নীরব ভূমিকা পালন করেছে বিশ্ব বিবেক। দানবের ভয়াল অট্টহাসিও তাদের স্পর্শ করেনি। যারা মানবাধিকারের ফেরি করে বেড়ায় তাদের মুখেও কুলুক আঁটা। সামান্য বিবৃতি ছাড়া কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি সরব ভূমিকা পালন করেনি। পশ্চিমা বিশ্ব যারা একটি পশুর গায়ে টোকা লাগলেও
গাজায় যখন এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলছে, শিশু ও নারীকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, তখন কোথায় সেই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা। কোথায় তাদের সেই গালভরা বুলি? শিশু অধিকার-সংক্রান্ত বিশ্ব কনভেনশনের ৩৮ নং ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো যুদ্ধে সংঘর্ষরত পক্ষগুলো বেসামরিক লোকজন, বিশেষ করে শিশুদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে। বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ শিশু অধিকার-সংক্রান্ত কনভেনশনে স্বাক্ষরও করেছে। গাজায় ইসরাইলি বর্বরতায় যখন শিশু, নারী ও বেসামরিক মানুষ নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে, তখন কোথায় কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো। তারা কেন প্রতিবাদ করছে না? গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীর সারি সারি মৃতদেহ দেখেও কি তাদের বিবেক কিছু বলছে না? কিসের এত ভয় তাদের? মায়ের গর্ভের সন্তান যেখানে বুলেটবিদ্ধ হয়, তার মতো নিষ্ঠুর ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য কী হতে পারে, তাতেও তাদের বিবেক নাড়া দেয় না।
দুই
বৃটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বৃটেনের পররাষ্ট্রসচিব আর্থার জেমস বেলফোর ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার আলোকে ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনন্দমুখর পরিবেশে ফিলিস্তিনে একটি আরব রাষ্ট্র ও ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরাইল স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আরবের নোলকে অবৈধ এই রাষ্ট্রটির ভ্রুণ জন্ম নেয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে ওঠে। ওই বছরই ইসরাইল এবং আরব যৌথবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ১৯৬৭ সালের ২৭ মে মিসরের প্রেসডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের ঘোষণা করেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ইসরাইলকে ধ্বংস করা। আরবরা যুদ্ধ করতে চায়। ১৯৬৭ সালের ৬ জুন হয় দ্বিতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, কুয়েত ও সৌদি আরব এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং যুদ্ধবিমান পাঠায়। যুদ্ধে ইসরাইল আরবদের বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। মিসরের গাজা উপত্যকা ও সিনাই উপদ্বীপ, জর্ডানের পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। তিন লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুহারা হয় এবং তারা গাজা উপত্যকা ছেড়ে জর্ডানে চলে যায়। ১৯৭৩-৭৪ সালে তৃতীয় এবং ১৯৮২ সালে চতুর্থ আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয় এবং প্রতিটি যুদ্ধেই ইসরাইল জয়লাভ করে।
ইসরাইল রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ পুরো আরব বিশ্বকে সংঘাতের মধ্যে ঠেলে দেয়। মূলত আরব ভূখণ্ডে ইহুদিদের চোখ পড়ে উনিশ শতকের দিকে। হিটলার ক্ষমতায় আসার পর নাৎসিদের নিপীড়ন শুরু হলে জার্মানি থেকে ইহুদিরা পালিয়ে আরবের দিকে চলে আসে। আরবের গণমানুষ প্রতিবাদ করলেও বৃটেন ও আমেরিকার মদদে ইহুদিরা আরব অঞ্চলে বসবাস শুরু করে এবং আস্তে আস্তে তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ইহুদিরা ছিল অত্যন্ত হতদরিদ্র। তারা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে গাদাগাদি করে থাকত। কিন্তু সা¤্রাজ্যবাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে বৃটেন ও আমেরিকার মদদে এরা প্রতিনিয়ত ক্ষমতাশীল এবং বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। তার পর থেকেই ইসরাইলের এই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বাড়তে থাকে।
সিরিয়ার পাশেই ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের গাজা একটি অতি ক্ষুদ্র অঞ্চল। দুদিকে ইসরাইল, একদিকে মিসর ও একদিকে ভূমধ্যসাগর। এর আয়তন ৩৬০ বর্গকিলোমিটার। গাজার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। কট্টরপন্থী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত চার লাখ ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে জাতিসংঘের ৮৬টি আশ্রয় শিবিরে, তাতেও তাদের শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ইসরাইলিরা প্রতিনিয়ত নারী-শিশু হত্যা করে চলেছে। প্রতিবার হামলার পর ইসরাইল ফিলিস্তিনের কিছু ভূখণ্ড দখলে নেয়। এভাবে সঙ্কুচিত হতে হতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখে।
তিন.
গাজায় ইসরাইলি বর্বরতায় সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি উত্থাপন হয়েছে তা হলো, আরব রাষ্ট্রগুলো কী করছে? শতাব্দীর অন্যতম হিংস্রতার বিরুদ্ধে তাদের ভূমিকা কী? মুসলমানদের মেরুদ-হীন সংগঠন ওআইসি ও আরব লীগের ভূমিকা কী? আরব রাষ্ট্রগুলো ছোট্ট ভূখণ্ডের ইসরাইলের দিকে থুতু নিক্ষেপ করলেও তো তারা ভেসে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের হতভাগা মুসলমানদের এই করুণ পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে কেন? ‘গোটা মুসলিম উম্মাহ একদেহ একপ্রাণ’ ইসলামের এই প্রাণশক্তিতে আরববিশ্ব উজ্জীবিত হচ্ছে না কেন? প্রশ্নগুলোর কোনো সন্তোষজনক জবাব নেই। গাজা ইস্যুতে আরব দেশগুলোর ভূমিকায় দেড়শ কোটি মুসলমান হতাশ। নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার জন্য আরব দেশের সরকারপ্রধানেরা ধিক্কার ছাড়া আর কিছু পাওয়ার যোগ্য নন।
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৪৮ সাল থেকে চলে আসা ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট নিয়ে আরব নেতাদের এ ভূমিকা নতুন নয়; বরং তা চিরন্তন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বড় জোর কিছু বুলি আওড়িয়ে দায়সারার প্রথা বরাবরের মতো আজও জারি রেখেছেন আরব নেতারা। বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, মিসর, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইরাক, সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলোতে যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা নিজেদের গদি রক্ষায়ই বেশি ব্যস্ত। যেমন সৌদি আরবে ‘বাদশাহ তন্ত্র’ টিকিয়ে রাখতে হলে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তাদের আপস করে চলতে হয়। ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে পশ্চিমারা মানবাধিকার ইস্যুতে রাজপরিবারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। পশ্চিমা প্রশ্রয়ে ভিন্নমতাবলম্বীরা মাথাচাড়া দিতে পারে। এতে রাজতন্ত্রের গদি টলোমলো হয়ে উঠতে পারে। এসব কারণে গাজা নিয়ে সৌদি আরবের মাথাব্যথা কম।
এদিকে সিরিয়ার অবস্থাও তাই। সেখানকার বাশার আল আসাদ নিজের গদি সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। একদিকে বিদ্রোহীদের চাপ, অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের উপর্যুপরি অবরোধ। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে, গাজার ঘটনায় অস্তিত্ব-সংকটে পড়া আসাদ সরকার বরং বেশি লাভবান হচ্ছে। বিশ্বের মনোযোগ এখন গাজায়। এই সুযোগে সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বিদ্রোহীদের দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে আসাদ বাহিনী। আর মিসরের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রখ্যাত আরব কলামিস্ট মোহাম্মাদ আল মোসাফের বলেছেন, ইসরাইল ভালো করেই জানে গাজায় হামলার বিষয়ে সিসি (মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ এল সিসি) মুখ খুলবেন না। তিনি বলেন, শুধু মিসর নয়, ইয়েমেন, ইরাক, লিবিয়া, এমনকি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও নিজেদের গদি বাঁচাতে ব্যস্ত। তারা গাজার সাহায্যে এগিয়ে আসবেন না। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গাজা ইস্যুতে সিসিকে সরাসরি ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, সিসির মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হবে কীভাবে? তিনি নিজেই তো ইসরাইলের পক্ষের লোক। তিনিই তো গাজায় মানবিক সাহায্য দেয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছেন।
ইরাকে বর্তমানে নুরি আল মালিকির যে শিয়াপ্রধান সরকার ক্ষমতায় আছে, তাকে অনেকেই আমেরিকার এজেন্ট সরকার মনে করে। সুন্নি সাদ্দামকে উৎখাত করে শিয়া মালিকিকে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে পশ্চিমাদের যে প্রত্যক্ষ ‘অবদান’ আছে, সে কথা মালিকির ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এখন সুন্নি বিদ্রোহীরা ইরাকের একটা বিরাট অংশ দখল করে নিয়েছে। তাদের লক্ষ্য এখন বাগদাদ। ফলে মালিকির নিজের আসন নিয়েই এখন টানাটানি অবস্থা চলছে। এর মধ্যে আমেরিকার প্রতিশ্রুত মিত্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস বা ফুরসত কোনোটাই মালিকির নেই। জর্ডানের পার্লামেন্টে গাজায় বর্বরতার নিন্দা জানানো হযেছে বটে, তবে তাদের এই বক্তব্যে ইসরাইলকে প্রতিরোধ করার জোরালো আহ্বান ছিল না। গাজা ইস্যুতে সামর্থ্যবান ইরানের ভূমিকা আরো হতাশাজনক। সবমিলিয়ে ‘আরব ভাইদের’ বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি ফিলিস্তিনিদের কাছেও অপরিচিত নয়। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে হামাস খুব ভালো করেই জানে, তাদের দুঃসহ পরিস্থিতি নিয়ে মোটেও ভাবিত নয় আরব বিশ্ব। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দুনিয়ার কাছ থেকে তারা খুব একটা প্রত্যাশাও করে না।
চার
গাজা ইস্যুতে আমাদের মতো তৃতীয় দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখার সামর্থ্য নেই। নিন্দা প্রস্তাব, বিক্ষোভ, কুশপুত্তলিকা দাহ এসব ছাড়া আর তেমন কিছু করার নেই। বড়জোর ইহুদি পণ্য বর্জনের জিহাদে অংশ নিতে পারি। এটা বেশ কার্যকরও। আমাদের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে একাধিকবার ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় সুবিধা হয়েছে, ইচ্ছে মতো প্রতিবাদ জানানো গেছে। এই ইস্যুতে আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোও ইসরাইলের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার রয়েছে। তবে সে অর্থে বিক্ষোভে কোনো উত্তালতা সৃষ্টি করতে পারেনি আমাদের ইসলামী দলগুলো। অতীতে আফগানিস্তান বা ইরাকে হামলার প্রতিবাদে ইসলামী দলগুলো যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে এবার সেটা চোখে পড়েনি। সম্প্রতি আলোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামেরও তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না গাজা ইস্যুতে। দায়সারা গোছের বিবৃতি ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়েনি।
আসলে দিন দিন আমাদের বিবেক ও অনুভূতিশক্তি যেন সক্রিয়তা হারাচ্ছে। কোনো অন্যায়-অনাচার ও অনৈসলামিক কাজও আমাদেরকে জাগ্রত করে না। আমরা সবাই নিজেদের নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে, উম্মাহর দুর্দিনে তাদের পক্ষে জোরালো অবস্থান, অন্তত তাদের জন্য একটু খোলামনে দুআ করার প্রবণতাও আমাদের মধ্য থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। অতীতে দেখেছি, সামান্য ইস্যুতে ঢাকার রাজপথ কাঁপতো ইসলামপন্থীদের গর্জনে। শায়খুল হাদিস, আমিনী, পীর সাহেব চরমোনাইয়ের মতো মহীরুহতুল্য নেতারা রাজপথে নেমে পড়তেন অনায়াসে। তাঁদের ডাকে সাড়া পড়তো গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে। আজ আর সেই নেতাও নেই, রাজপথে কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম তথা প্রতিবাদও চোখে পড়ে না। একই ইস্যুতে আমরা প্রতিবাদ করি বহুধা বিভক্ত হয়ে। আমাদের প্রতিবাদের খণ্ডিত অংশগুলো বায়তুল মোকাররম থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্তই সীমাবদ্ধ; এর বাইরে কোনো সাড়া ফেলে না। আমরা কারো ডাকে কেউ সাড়া দিই না। নেতৃত্বশূন্যতার এই যে ধারাবাহিকতা জাতি হিসেবে তা আমাদেরকে কোথায় নিয়ে ঠেকাবে তা আল্লাহ মালুম। বিশ্ব মুসলিমের যেমন দরদী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতা দরকার, তেমনি আমাদেরও জাতীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী নেতৃত্ব প্রয়োজন। অন্যথায় নেতৃত্বশূন্য হতে হতে একদিন আমাদেরও গাজার মুসলমানদের মতোই ভাগ্যবরণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।