লোকসভা নির্বাচনে ফ্যাক্টর মুসলিম ভোট

uভারতজুড়ে চলছে নির্বাচনী ডামাঢোল। বর্তমান ক্ষমতাসীন কংগ্রেস আর প্রধান বিরোধী দল বিজেপির মধ্যেই লড়াই হবে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনে। সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের এই নির্বাচনে নজর গোটা বিশ্বের। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের আগ্রহ ও কৌতূহলটা একটু বেশিই। ভারতের নির্বাচনে বরাবরই মুসলিম ভোট একটি বড় ফ্যাক্টর। এবারো এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এবার মুসলিম ভোট ইস্যুতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপি এবার দিল্লির মসনদে আসীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর দলটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে এমন এক ব্যক্তিকে যিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদ আর মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবেই তার পরিচিতি। বিশেষ করে ২০০২ সালে গুজরাটের ভয়াবহ দাঙ্গায় ইন্ধনদাতা হিসেবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে নরেন্দ্র মোদির মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতাও মুসলিম ভোটারদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তার দলের পক্ষ থেকেও ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।

বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির এই ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের ভোট টানা। নরেন্দ মোদি লৌখনোরর এক নির্বাচনী সভায় মুসলমানদের উদ্দেশে বলেছেন, গুজরাট হিন্দুদের একক রাজত্ব, সেখানেও মুসলমানদের অবস্থা ভালো হয়ে যাচ্ছে। ৬৩ বছর বয়সী মোদির ব্যাপারে বিশ্লেষকদের মত হলো, এবারের নির্বাচনে মোদির দল জিততে পারে। তবে দল্লির মসনদে আসীন হওয়ার জন্য তার মুসলমানদের ভোট লাগবে। লৌখনো যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে মোদির জনসভায় লাখখানেক লোক অংশ নেন। তবে মুসলিম বন্ধুত্বের টোপ দিলেও মোদির জনসভায় আসা কর্মীদের বেশির ভাগের গায়ে ছিল কমলা রঙের পোশাক, যাকে সাধারণত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পোশাক মনে করা হয়। এতে প্রমাণ হয়, মুখে বিজেপি যতই বলুক ধর্মনিরপেক্ষতা কথা কাজেকর্মে কট্টর হিন্দুত্ববাদ ছাড়তে পারেনি দলটি।

ভারতের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত স্যেকুলার দলগুলোই জয় পেয়েছে। আর বেশির ভাগ দলই স্যেকুলার হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে মুসলমানদের সঙ্গে ধোঁকাবাজির আচরণ করেছে। এখন বিজিপির লোলুপ দৃষ্টিও পড়েছে মুসলিম ভোটের ওপর। মুসলমানদের ভোট টানার জন্য তারা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। এজন্য মোদির পাশাপাশি বিজিবি প্রধান রাজনাথ সিংও মুসলমানদের সামনে মাথা ঝুঁকানোর নাটক করছেন। তিনি মুসলমানদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা কোনো ভুল করে থাকলে মাথা নত করে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত।

বিজিপি প্রধান হয়তো এ কথা ভুলে গেছেন, ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোনো অন্যায় কাজ করে ফেললে সেটাকে ভুল বলা যায়। কিন্তু যখন একটি বিশাল দল সমষ্টিগতভাবে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঙ্গা উস্কে দেয় এটাকে নিছক ভুল বলে ক্ষমা চেয়ে পার পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগী মুসলমানরা মনে করেন, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কাজই হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেয়া এবং মুসলমানদের পুড়ে ছারখার করে দেয়া। অতীতে দলটি মুসলমানদের সঙ্গে এমন অসংখ্য আচরণ করেছে। যার ফলে মুসলমানরা বিজেপি সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে রেখেছে।

মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রথম বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড হলো ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা এবং এ ঘটনার পর মুসলমানদের কচুকাটা করা। আর দ্বিতীয় দফার সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হলো ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদির তত্ত্বাবধানে মুসলিম নিধন। আজ যখন রাজনাথ সিং এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সামান্য ‘সরি’ বলে পার পেয়ে যেতে চাচ্ছেন এর মানে হলো মুসলমানদের পাঁচশ বছরের ঐতিহ্যবাহী ইবাদতখানা গুড়িয়ে দেয়া তেমন কোনো বিষয় নয়। গুজরাটে মুসলমানদের রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়াও সামান্য বিষয়। নরেন্দ্র মোদির হাতে আজও লেগে আছে মুসলমানদের রক্তের দাগ। আর সেই নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে বিজেপি মুসলমানদের ভোট টানতে ব্যস্ত। সামান্য ক্ষমা চেয়েই তারা ভোটের বৈতরণী পার পেয়ে যেতে যাচ্ছেন। কারণ মুসলমানদের ভোটে ভাগ বসাতে পারলে বিজেপির ক্ষমতায় যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিজেপির এই কৌশল তেমন কাজে আসতে নাও পারে। মুসলমানরা বিজেপিকে বিশ্বাস করে না। কাজেই ধরে নেয়া যায়, শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ মুসলমানের ভোট বিজেপির বাক্সে পড়বে না। এটা বিজেপিও ভালো করেই জানে। তবুও তাদের চেষ্টা হলো কোনো রকম মুসলিম ভোটে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারলে মোদিবিরোধী ভোট তার জয়-পরাজয়ের জন্য ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে না। এজন্য বিজেপির নেতারা মুসলমানদের ভোট টানার নানা ফন্দি-ফিকির করে যাচ্ছেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে বিজেপি প্রচার-প্রচারণায় বেশি জোর দিচ্ছে। তুলনামূলক মুসলিম প্রার্থীও এবার বিজেপিতে বেশি রাখা হয়েছে। তবুও বিজেপি মুসলিম ভোট নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। দলটির নেতারা এখনো আশ্বস্ত হতে পারছেন না, মুসলিম ভোট শেষ পর্যন্ত তাদের বাক্সে আসবে তো! তাদের আশঙ্কা, মুসলিম ইস্যু জোরালো করে কংগ্রেস মোদির সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে। দিন যত গড়াচ্ছে মুসলিম ভোট নিয়ে বিজেপিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

বিজেপির আশঙ্কা, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর প্রদেশ ও বিহারের মতো প্রদেশগুলোতে তাদের ভরাডুবি হতে পারে। এসব এলাকায় মুসলিম ভোটের ব্যাপারে তাদের কৌশল হলো, নিজেদের অনুকূলে না আসুক, অন্তত মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যেন অবস্থান না নেয়। তাদের ধারণা, মুসলিম ভোটে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারলে আনুকূল্য তারাই পাবে।

বিজেপি প্রধান রাজনাথ সিং মুসলমানদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার যে টোপ দিয়েছেন এর রহস্য উন্মোচন হয়ে গেছে বিজেপির আরেক নেতার বক্তব্যে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ২০০২ সালে দাঙ্গায় মুসলিম হতাহতের যে ঘটনা ঘটেছে এর জন্য কি বিজেপি মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চাইবে? তখন ওই নেতা বলেন, গুজরাটের দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির কোনো অপরাধ নেই, সে সম্পর্কে তো আগেই সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। রাজনাথ সিং মূলত মুসলমানদের আবেগকে প্রভাবিত করতে চেয়েছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিজেপি যদি আসলেই মুসলমানদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চাইত তবে নরেন্দ্র মোদির মতো একজন মুসলিমবিদ্বেষী নেতাকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নির্বাচন করতো না। তার ক্লেদাক্ত অতীত সম্পর্কে দলটি এমন নির্মোহ থাকতো না। বরং বাস্তবতা হলো, কট্টর হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিম বদ্বেষী হওয়ার কারণেই মোদিকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করেছে বিজেপি। ২০০২ সালে যা হয়েছে তা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। খুব সহজেই এটা ভুলে যাওয়ারও নয়। মুসলমানদের মন থেকে সেই দাঙ্গার দগদগে ক্ষত এখনো শুকিয়ে যায়নি।

বিজেপির আসল উদ্দেশ্য ২৭২টির বেশি সংসদীয় আসন। টার্গেটসংখ্যক আসন পেলেই দলটি নিজের মতো করে সরকার ঘটন করতে পারবে। অথচ অটল বিহারি বাজপায়ীর নেতৃত্বেও এই টার্গেট পূরণ করতে পারেনি বিজেপি। এজন্য সব সম্প্রদায়ের ভোটের প্রয়োজন বলে মনে করে দলটি। তাই বিজেপি আজ তাদের ভাষায় মুসলমানদের মতো ‘অচ্ছুত’ একটি সম্প্রদায়ের ভোট পেতে মরিয়া। দিল্লির এক জনসভায় রাজনাথ সিং অত্যন্ত করুণ কণ্ঠে মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন বিজেপিকে একটি বারের জন্য সুযোগ দেন। তিনি কাতরকণ্ঠে বলেন, একবার আমাদের ভোট দিয়ে পরীক্ষা করুন। আমরা যদি অঙ্গীকার পূরণ না করি আর কখনো আমাদের দিকে ফিরে তাকাবেন না।

ভারতের উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী এবং সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান বলেন, গুজরাটের মুসলমানরা অজানা আতঙ্কে মোদিকে ভোট দিতে অপরাগ। আবার ভোট না দিলে হিন্দত্ববাদী সন্ত্রাসীরা মুসলমানদেরকে জীবিত পুড়িয়ে মারবে। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদির দাবি, তিনি মুসলমানদের সঙ্গে আছেন এবং গত দশ বছরে গুজরাটে কোনো দাঙ্গা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে তিনি পুরো ভারতকে গুজরাট বানিয়ে দেবেন। তবে মুসলমানরা মনে করেন, নরেন্দ্র মোদির মতো মানবতাবিরোধী অপরাধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না।
কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা আই কে সাইফ আলি বলেন, এটা স্বতঃসিদ্ধ বিষয় যে, বিজেপির রন্ধ্রে রন্ধ্রে মুসলিম বিদ্বেষ লুকিয়ে আছে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে দলটির মুসলিম ভোট প্রয়োজন। কারণ মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট ছাড়া বিজেপি পার পাবে না। তিনি প্রশ্ন রাখেন, রাজনাথ সিংয়ের সামান্য ক্ষমা প্রার্থনার প্রস্তাব কি মুসলমানদের দগদগে ঘা শুকিয়ে দিতে পারবে? মুসলমানরা কি গুজরাট দাঙ্গার মূল হোতা মানবতার শত্রু নরেন্দ্র মোদিকে এত সহজেই ক্ষমা করে দেবেন? তার মতে, রাজনাথ সিং ও নরেন্দ্র মোদির মুসলমানদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা একটি রাজনৈতিক ভাওতাবাজি। মুসলমানরা এটা কখনো গ্রহণ করবে না।

গুজরাট দাঙ্গাকে পশ্চিমা বিশ্বও ভয়াবহতম দাঙ্গা হিসেবে অভিহিত করেছে। সে দাঙ্গায় দুই হাজারের বেশি মুসলমান প্রাণ হারান। হাজার হাজার নারী সম্ভ্রম হারান। তৎকালীন প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, তার ইশারাতেই এই রক্ত ও আগুনের খেলায় মেতেছিল কট্টর হিন্দুরা। সন্ত্রাসী সংগঠন আরএইচএইচ এর পৃষ্ঠপোষক নরেন্দ্র মোদি ভয়াবহ দাঙ্গা চলাকালে পুলিশকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেননি। এই দাঙ্গা কারা ঘটিয়েছেন-এর প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের খোঁজে খোঁজে বের করে মোদির নির্দেশে হত্যা করা হয়। সেই ভয়ঙ্কর খুনি মোদি আজ বসতে যাচ্ছেন দিল্লির মসনদে। আর যাদের খুনে তার হাত রঞ্জিত সেই মুসলমানদের ভোটই তার সেই স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এবার ভারতীয় মুসলমানরাই সিদ্ধান্ত নেবেন তারা কার পক্ষে সমর্থন দেবেন।

ভারতে সর্বমোট মুসলমান ১৮০ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার ১৫ ভাগ। ছয়টি প্রদেশে মুসলিম ভোটার মোট ভোটারের ১১ ভাগ। রাজনৈতিকভাবে উত্তর প্রদেশে মুসলমানরা বেশি শক্তিশালী। এটি ভারতের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ। ভারতের লোকসভায় সবচেয়ে বেশি ৮০ আসন এই প্রদেশের। উত্তর প্রদেশ ছাড়া আর কোনো প্রদেশ বিজেপির শাসনক্ষমতায় যাওয়ার পেছনে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে না। বরাবরই এখানে বিজেপি খুব ভালো করতে পারে না। গত নির্বাচনে বিজেপি উত্তর প্রদেশ থেকে মাত্র ১০টি আসন পেয়েছিল। দলীয় ভোট থেকেও সেই নির্বাচনে বিজেপি উত্তর প্রদেশে ৪.৭ ভাগ ভোট কম পেয়েছিল। পরবর্তী প্রাদেশিক নির্বাচনেও বিজেপি এখানে খুব ভালো কিছু করতে পারেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে আজও সাম্প্রদায়িকতা বড় ফ্যাক্টর। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মোদি যদি উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্র প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেন তাহলে তার বিজয়ের সম্ভাবনা প্রচুর। আর এর জন্য অবশ্যই মুসলিম ভোট টানতে হবে। বিজেপি এখন মুসলিম ভোট টানতে মরিয়া। তবে কংগ্রেস এখনো পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারে নামেনি। কংগ্রেস নির্বাচনী মাঠে নেমে গেছে তাদের রিজার্ভ ভোট হিসেবে খ্যাত মুসলিম ভোটারদের টানা বিজেপির জন্য খুবই কষ্টকর হবে।

আরেকটি বিষয় হলো, মোদি ইতিপূর্বে গুজরাট দাঙ্গার জন্য অনুতপ্ত হননি এবং নিজের ভুলও স্বীকার করেননি। লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে হঠাৎ করে তিনি মুসলমানদের ক্ষতে মালিশ দেয়ার চেষ্টা করছেন। এটা তার রাজনৈতিক চাল বলেই মনে করেন সবাই। দাঙ্গার পর থেকে গুজরাটে বার বার মোদি বিপুল ভোটে পাস করেছেন। মুসলিম বিদ্বেষ পুঁজি করেই মোদির এই সফলতা। এমনকি প্রাদেশিক নির্বাচনে গুজরাটে বিজেপি থেকে কোনো মুসলমান প্রার্থীকে মনোনয়ন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। মোদির মন্ত্রিসভায় কোনো মুসলিম সদস্য রাখা হয়নি। সঙ্গত কারণেই ভারতীয় মুসলমানরা এই প্রশ্ন করতে পারেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কি মোদি পুরো দেশেই এমন হিন্দুত্ববাদ কায়েম করবেন?

,এক সাক্ষাৎকারে বিজেপি নেতা ভারতের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী এলকে আদভানি বলেছিলেন, সাম্প্রদায়িক কোনো দল ভারতের নির্দিষ্ট কোনো এলাকা শাসন করতে পারে; কিন্তু পুরো ভারত কখনো শাসন করতে পারবে না। কিন্তু সেই আদবানিই এক দশক পর ‘হিন্দুত্ববাদের’ ধারক হয়ে বিজেপির নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ভারতের রাজনীতির এসব বিষয় সামনে রেখে এই প্রশ্ন জাগে, এবার কি সত্যিই বিজেপি তাদের সম্পর্কে মুসলমানদের ধারণা পাল্টাতে সক্ষম হবে? নাকি মুসলমানদের কাছে টানার পেছনে তাদের কোনো অভিসন্ধি রয়েছে। ভারতের বেশ কিছু প্রদেশে বিজেপির শাসন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। মুসলমানদের জন্য কিছু করেছে সেটা উল্লেখ করার মতো এখনো বিজেপির ভাণ্ডারে কিছু নেই। তারপরও কি মুসলিম ভোটাররা এবার তাদের শাসক হিসেবে বিজেপিকে বেছে নেবে? উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত।

Related posts

*

*

Top