সংস্কৃতি মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সংস্কৃতির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সংস্কৃতির সুষ্ঠু চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে মন ও মননের বিকাশ ঘটে। ইসলাম মানুষের সহজাত ও প্রকৃতিগত একটি ধর্ম। সুস্থ ও শালীন ধারার সংস্কৃতিকে ইসলাম সযতনে লালন করে। যে কোনো সুস্থ, সুন্দর, মননশীল সংস্কৃতির পক্ষে ইসলামের অবস্থান। ইসলাম যেমন প্রেরণা ও আদর্শে একটি অদ্বিতীয় এবং অনন্য ধর্ম, তেমনি ইসলামের সংস্কৃতিও অন্য যে কোনো সংস্কৃতির চেয়ে বলিষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ।
আমাদের প্রিয়নবী (সা.) সুরুচিশীল ও সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শুধু ইসলামের অনুসারীরাই নয়, ইহুদি-খ্রিস্টান, কাফের, পৌত্তলিক সবাই তার সংস্কৃতিবোধকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করত। তার ব্যবহার, আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, কথাবার্তা, চাল-চলন যে কোনো রুচিশীল এবং সুন্দর জীবনযাপনে আগ্রহী মানুষকে আকৃষ্ট করত। আল্লাহর নবীরা এমন কোনো বিষয় এড়িয়ে যাননি, মানব জীবনের সঙ্গে যা কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ মলমূত্র ত্যাগের কথা উল্লেখ করা যায়। একান্ত ব্যক্তিগত ও নির্জনে সম্পন্ন করার কাজ এটি। মানুষের জীবনের সঙ্গে এর ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। মহানবী (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে প্রকৃতির এই স্বাভাবিক কর্মটি সম্পাদনে উত্তম ও কল্যাণকর পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অবহিত করেছেন। হাদিসের কিতাবে বর্ণিত আছে, হজরত সালমান ফারসীকে (রা.) জনৈক ইহুদি অনেকটা বিদ্রƒপের ভাষায় বলল যে, ‘তোমাদের নবী তোমাদের ছোটখাটো বিষয়, এমনকি প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের পদ্ধতিও শিক্ষা দেন।’ তার উদ্দেশ্য ছিল মহানবীকে (সা.) হেয় করার চেষ্টা করা। কিন্তু হজরত সালমান ফারসী (রা.) তাকে বুঝিয়ে দেন, ‘এই স্বাভাবিক কাজটি কীভাবে উত্তমভাবে ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সারতে হয় আমাদের নবী আমাদের তাই শিক্ষা দেন।’
ইসলাম মানুষকে বাস্তব জীবনে স্বতন্ত্র জীবনবোধের শিক্ষা দিয়েছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা যে জীবনবোধের আবর্তে পরিচালিত হচ্ছে এর মধ্যেই তার সংস্কৃতির পরিচয় ফুটে ওঠে। একজন প্রকৃত মুসলমান মিথ্যা কথা বলতে পারবে না, অন্যকে ধোঁকা দিতে পারবে না, ইচ্ছে করলেই সে তার প্রবৃত্তির চাহিদা যে কোনোভাবে নিবারণ করতে পারবে না, অন্যায় দেখলে নিজের ইমানি দাবিতে প্রতিবাদ করবে, জীবনযাপনে সে হবে সাদাসিধে, সুশৃঙ্খল, তার আচার-ব্যবহারে সবাই অভিভূত হবে এসবই মুসলিম সংস্কৃতির দাবি।