সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী র. স্মারকগ্রন্থ

Nadvi Smarokগ্রন্থের নাম: সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী র.স্মারকগ্রন্থ; ব্যবস্থাপনা: মাওলানা মুহাম্মদ সালমান; সম্পাদক: মাওলানা লিয়াকত আলী; নির্বাহী সম্পাদক: জহির উদ্দিন বাবর; প্রকাশক: আল ইরফান পারলিকেশনন্স; ১১ বাংলাবাজার, ঢাকা; পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬৬৮; মূল্য : ৫০০ টাকা মাত্র
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী র.-এর পরিচয় বিদগ্ধ জনের কাছে নতুন নয়। ইতিহাসবিদ, আরবি ভাষা বিজ্ঞানী ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের এ গবেষকের খ্যাতি উপমহাদেশের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে আরব, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার জ্ঞানী ও শিক্ষিত মানুষের হৃদয়ে বহুমাত্রিক প্রতিভার কারণে স্থায়ী আসন

পেয়েছে। ভারতের লাখনৌস্থ নাদওয়াতুল উলামা থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টার পর্যন্ত মনস্বী এ কলম সৈনিকের সগর্ব পদচারণা। তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা দু’শতাধিক। এটা রীতিমত বিস্ময়কর ব্যাপার যে, একজন অনারব হয়ে উচ্চাঙ্গের আরবী ভাষায় লিখিত তাঁর গ্রন্থাবলী প্রকাশিত হয় বৈরূত, কায়রো, মক্কা, দামিশক ও কুয়েতের মর্যাদাবান প্রকাশনা সংস্থা থেকে। পরবর্তী সময়ে এসব গ্রন্থ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহুল প্রচলিত ভাষায় অনুদিত হয়ে ইসলামী সংস্কৃতি, দাওয়াত ও তাবলিগের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টিতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার বিজয়ী শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ জ্ঞানতাপসের রচনাশৈলী, অপূর্ব বাক্যবিন্যাস, বর্ণনার সৌকর্য, দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপকতা ও বিষয়বস্তুর নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রাচ্য-প্রতীচ্যের মুসলমানদের প্রাণে নতুন স্পন্দন সৃষ্টি করে। মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আনতে তাঁর কলম ছিল সদা সোচ্চার।

আল্লামা নদভী র. দু’বার বাংলাদেশ সফর করেন যথাক্রমে ১৯৮৪ ও ১৯৯৪ সালে। বিভিন্ন স্থানে ভাষণ দিতে গিয়ে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে আলিমদের ব্যাপকহারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আল্লাহর ওয়াস্তে বাংলা ভাষার বাগডোর অন্যদের হাতে ছেড়ে দেবেন না, আপনার চিরকাল পাঠক হবেন অন্যরা লেখক হবে এটা কাম্য নয়, শোভনও নয়। বাংলা ভাষা চর্চায় শিথিলতা আলিমদেরকে বাংলাদেশে অপাঙক্তেয় করে দেবে।” বাংলাদেশের আলিমদের সাথে আল্লামা নদভীর র.-এর ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তিনি সব সময় চেয়েছেন বাংলা ভাষায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো অনুবাদিত হোক। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ খবরও রাখতেন। ইতোমধ্যে তাঁর ১৫/২০টি গ্রন্থ বাংলায় অনুদিত হয়েছে। সারা দুনিয়ায় তাঁর ২৩জন খলিফার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছেন তিন জন। দারুর রাশাদের প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ সালমান দা.বা. তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আলোচ্য স্মারকগ্রন্থ তাঁরই চিন্তা ও মেহনতের ফসল। ইতঃপূর্বে তিনি “সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী : জীবন ও কর্ম” বিষয়ক ৫০০ পৃষ্ঠার একটি জীবনী গ্রন্থ প্রণয়ন করে রীতিমত কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। মাওলানা মুহাম্মদ সালমান দা.বা., আল্লামা সুলতান যওক নদভী দা.বা ও মাওলানা আবু সাঈদ ওমর আলী র.-এর প্রচেষ্ঠায় সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী র.-এর চিন্তাধারার সাথে এ দেশের আলিম ও বুদ্ধিজীবীদের পরিচয় ঘটে। আল্লামা নদভীর র.-এর মত কীর্তিমান ব্যক্তির মৃত্যু নেই, ক্ষয় নেই, শেষ নেই। পৃথিবীতে তিনি নিজস্ব কীর্তির মহিমায় অমর ও অবিনশ্বর। কাল পরম্পরায় তিনি অমর হয়ে থাকবেন তাঁর সৃজিত সাহিত্য কর্মের মাঝে।

Nadvi Smarokআলোচ্য স্মারকগ্রন্থে ৫৪জন লেখকের বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ, স্মৃতিকথা, পত্র স্থান পেয়েছে যারা আল্লামা নদভী র.-এর সান্নিধ্য পেয়েছেন অথবা তাঁর কালজয়ী লেখনীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। মাওলানা লিয়াকত আলী দা.বা.-এর মত শক্তিশালী কলম সৈনিকের বলিষ্ট সম্পাদনায় সুসম্পাদিত এ স্মারকগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বিজ্ঞ লেখকবৃন্দ এ স্মারকগ্রন্থে আল্লামা নদভী র.-এর জীবনের নানা ঘটনা প্রবাহের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দিক রূপায়িত ও বিশ্লেষিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। বাংলাদেশের বরেণ্য আলিম ও ইসলামি সাহিত্যের অগ্রনকীব হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান দা.বা-এর সুচিন্তিত ও তাৎপর্যপূর্ণ ‘মুখবন্ধ’ স্মারকগ্রন্থের মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সিরিয়াস গবেষকদের জন্য উক্ত রচনা ‘আকর গ্রন্থ’ হিসেবে সমাদৃত হবে। গ্রন্থের প্রচ্ছদ পাঠকদের দৃষ্টি কাড়ার মতো মনোরম। বোর্ড বাঁধাই, উন্নত কাগজ, সুন্দর ছাপা গ্রন্থটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আহলে ইলমদের সংগ্রহে রাখার মতো এটা একটি আকর্ষণীয় রচনাসম্ভার। পাঠকপ্রিয়তায় গ্রন্থটি শীর্ষ তালিকাভূক্ত হোক এটাই কামনা। -ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

*

*

Top