এশিয়ার শীর্ষ ৫ সংবাদপত্র

14014676831973আসাহি শিম্বুন

জাপানের বহুল প্রচারিত দৈনিক। একযোগে প্রকাশ হয় টোকিও, ওসাকা, ফুকোওকা ও জাপানের প্রধান প্রধান সিটি থেকে। ১৮৭৯ সালের ২৫ জানুয়ারি পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিশ্বে সর্বাধিক সার্কুলেটেড দৈনিকগুলোর একটি। ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসের জরিপ অনুযায়ী এর সার্কুলেশন এক কোটি ৪৩ লাখ ২৩ হাজার ৭৮১। তবে ২০১০ সালের জরিপ অনুযায়ী এর প্রভাতী সংস্করণই সাত কোটি নয় লাখ ৬০ হাজার কপি ছাপা হয়। পত্রিকাটি দিনে কয়েকটি সংস্করণ বের করে। আসাহি শিম্বুন ১৯৪৮ সালে আসাহি প্রাইজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রধান সম্পাদক Yoichi Funabashi. পত্রিকাটি রক্ষণশীল মতার্শের। ডেইলি আসাহি জাপানসও একই গ্রুপের পত্রিকা। ইংরেজি ভাষায় বহুল প্রচারিত দৈনিক। এছাড়া, ডেইল হোসি শিম্বুন, স্পোর্টস, বিভিন্ন সাপ্তাহিক, মাসিক ম্যাগাজিন রয়েছে এ গ্রুপের মালিকানাধীন। নিপ্পন টেলিভিশন নেটওয়ার্কও এ গ্রুপের। ২০০৬ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপের স্পন্সর ছিল আসাহি শিম্বুন।

নিশুশা নিউজপেপার কোম্পানি ১৮৭৬ সালে ছোট আকারের একটি পত্রিকা প্রকাশ করে। ১৯২৪ সালে সোরিকি মাতসোতারু কোম্পানি প্রকাশনার দায়িত্ব নেয়। তারা পত্রিকাটিকে পাঠকের উপযোগী করে সাজায়।

১৯৪১ সালে পত্রিকাটি টোকিওর সবচেয়ে বেশি সার্কুলেশনের পত্রিকার হিসেব অবস্থান জোরদার করে। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পত্রিকাটি কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও পরে তা সামলে নেয়।&

দৈনিক জাগরণ

দৈনিক জাগরণ হিন্দি ভাষার পত্রিকা। ভারতে প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে। ইন্ডিয়ান রিডারশিপ সার্ভে অনুযায়ী ভারতের সর্বাধিক পঠিত দৈনিক সংবাদপত্র। শুধু সংবাদই নয়, ভারতে এটি একটি ব্র্যান্ড হিসেবেও পরিচিত। বর্তমানে এর পাঠকসংখ্যা পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ প্রায়।
বিবিসি ও রয়টার্সের জরিপ অনুযায়ী ভারতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সংবাদ পরিবেশন করে দৈনিক জাগরণ। ২০১০ সালের তিন মাসের জরিপে এ ফলাফল বেরিয়ে আসে।
দৈনিক জাগরণ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৪২ সালে। ভারতের জানসি থেকে এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশ হয়। ১৯৪৭ সালে কানপুরে দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়। পত্রিকাটির প্রধান কার্যালয় কানপুরে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন যখন বেগবান হচ্ছে তখনই পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রী পুরান চন্দ্র গুপ্ত। মানুষের স্বাধীন মতামতের প্রতিনিধিত্ব করবে এটাই ছিল পত্রিকাটির মূল লক্ষ্য।
ভারতের কানপুর, রেওয়া, ভূপাল. গোরাকপুর, বেনারসি, এলাহাবাদ, লক্ষৌ, মিরাট, আগ্রা, দিল্লিসহ প্রধান প্রধান শহর থেকে দৈনিক জাগরণের সংস্করণ বের হয়। পত্রিকাটির প্রকাশক জাগরণ প্রকাশ লিমিটেড। ইন্ডিয়ার সবকটি প্রদেশ কাভার করে পত্রিকাটি। দৈনিক জাগরণই সর্বপ্রথম ভারতে পাঠকদের সবচেয়ে কাছাকাছি আসতে সক্ষম হয়।

জাগরণ ডটকম. বিশ্বের বিস্তৃত নিউজ পোর্টাল। জাগরণ গ্রুপের অন্যান্য মিডিয়া হলো: আই নেক্সট, সিটি প্লাস, মিডওয়ে, ইনকিলাব, সাকী, জাগরণ এঞ্জেস, জাগরণ সলোশন, জাগরণ ফাউন্ডেশন, জাগরণ ইন্টারন্যাশনাল। জাগরণের সম্পাদক মি. পাওয়ান আর চাওলা।

দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া

দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, সংক্ষেপে টিওআই। ইংরেজি ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক। যে কোনো ভাষার সংবাদপত্রে এর অবস্থান অষ্টম। পরিচালনা করেন বেনেট কোলমেট এন্ড কোম্পানি লিমিটেড। প্রধান সম্পাদক জগদীশ বোস। প্রতিষ্ঠা ১৮৩৮ সালে। রাজনৈতিক মতাদর্শ, উদারপন্থী। সদর দফতর নয়া দিল্লী। পত্রিকাটি সাহু জেইন গ্রুপের মালিকাধীন।
২০০৮ সালে ইন্ডিয়া সার্কুলেশন অডিট ব্যুরোর তথ্য মোতাবেক এর সার্কুলেশন ৩১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি। ইন্ডিয়ান রিডারশিপ সার্ভের ২০১০ সালের জরিপ অনুযায়ী টাইমস অফ ইন্ডিয়ার পাঠক সংখ্যা ৭০ লাখ ৩৫ হাজার। ওয়েবসাইটেও পত্রিকাটি সবচেয়ে বেশি দেখা হয়। ২০০৯ সালের মে মাসে পত্রিকাটিরি ১৫৯ মিলিয়ন পৃষ্ঠা দেখা হয়েছে, যা নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য সান, ওয়াশিংটন পোস্ট, ডেইলি মেইল এবং ইউএসএ টুডে থেকে বেশি।
ইন্ডিয়ান টাইমস ৩ নভেম্বর ১৮৩৮ সালে বোম্বাই টাইমস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তখন বৃটিশ শাসন। প্রথমে প্রতি শনি ও বুধবার অর্ধ সাপ্তাহিক হিসেবে বের হতো। রায় বাহাদুর নারায়ণ দিনান্ত বেলকার পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা। বৃটেনের সংবাদ বেশি গুরুত্ব পেতো। ইন্ডিয়ান সংবাদও থাকত। ১৮৫০ সাল থেকে দৈনিক সংস্করণ শুরু হয়। ১৮৬১ সালে বোম্বে টাইমস হয়ে যায় ইন্ডিয়ান টাইমস।

ভারত স্বাধীনতার পর পত্রিকাটির মালিকানা লাভ করে বিশিষ্ট শিল্প পরিবার ডালিয়াস। পরে এটি সাহু শান্তি প্রাসাদ জৈন’র জৈন গ্রুপ মালিকানা লাভ করে।

জানা গেছে, ইংরেজি সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যায় বিশ্বে এখন ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া শীর্ষস্থানে রয়েছে। এর সার্কুলেশন দৈনিক কমপক্ষে ৪০ লাখ কপি। ভারতের উচ্চ শিক্ষিত ইংরেজি জানা ব্যক্তিদের মধ্যে পত্রিকাটির যথেষ্ট কদর রয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিজ্ঞাপনের মূল্যহার সে দেশের অন্যান্য দৈনিকের চেয়ে দশগুণ বেশি।

জং

জং পাকিস্তানের শীর্ষ জাতীয় দৈনিক। এর সার্কুলেশন প্রায় আট লাখ কপি। জং গ্রুপকে বলা হয় পাকিস্তানের মিডিয়া মোঘল। তাদের মিডিয়া সাম্রাজ্য টিকে আছে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে। বিশ্বের বহুল প্রচলিত কয়েকটি দৈনিকের একটি রোজনামায়ে জং।
দৈনিক জং ১৯৩৯ সালে মীর খলিলুর রহমান দিল্লি থেকে শুরু করেন। ওই সময় মুসলমানদের পক্ষে আওয়াজ তোলার মতো কোনো মিডিয়া ছিল না। রাজনৈতিকভাবে মুসলিম লীগ ছিল মুসলমানদের পক্ষের বড় শক্তি। মুসলমানদের স্বার্থে কথা বলা এবং মুসলিম লীগের মূখপত্র হিসেবে কাজ করার জন্য দৈনিক জং-এর যাত্রা শুরু। শুরুর দিকে পত্রিকাটির অবস্থা ততটা রমরমা ছিল না। অনেক সংগ্রাম করে মীর খলিলুর রহমান পত্রিকাটির প্রকাশনা চালিয়ে যান।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পত্রিকাটি পাকিস্তানে চলে আসে। করাচি তখন পাকিস্তানের রাজধানী। সেখানে রাতারাতি শিল্পের বিকাশ ঘটে। করাচিকে একটি আধুনিক ও উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চলে। দেখতে দেখতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে করাচি। ফলে শহরটি সংবাদপত্রের বিকাশের জন্য ছিল খুবই উপযোগী।
করাচি আসার পর জং ও আনজামের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিষয়বৈচিত্র্য ধারণ করে পত্রিকা দুটি এগিয়ে যায়। তাদের এই রুচিশীল ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার কারণে পাঠকদের মধ্যে সংবাদপত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। কিন্তু এক পর্যায়ে দৈনিক আনজাম প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে। পত্রিকাটি দৈনিক থেকে সাপ্তাহিকের রূপ নেয়। জং-এর সঙ্গে তখন প্রতিযোগিতায় ওঠে আসে ইংরেজি দৈনিক ডন। অবিভক্ত পাকিস্তানের শেষ দিনগুলোতে পত্রিকা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে দৈনিক ডন ইংরেজি পত্রিকা হিসেবে যথেষ্ট প্রভাবশালী হলেও উর্দু ভাষার দৈনিক হিসেবে জং পাকিস্তানে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। অন্যগুলোর প্রচারসংখ্যা এর ধারেকাছেও নেই।
দৈনিক জং বর্তমানে পাকিস্তানের বড় বড় শহর লাহোর, করাচি, রাওয়ালপিন্ডি, ইসলামাবাদ, কোয়েটা মুলতান, শেকোপুরা, ভাওয়ালপুর, গুজরাট, শিয়ালকোট, গুজরানওয়ালা, ফয়সালাবাদ ছাড়াও লন্ডন থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়। পাকিস্তানের সবগুলো বড় শহরে এর ব্যুরো অফিস রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে তাদের প্রতিনিধি আছে।
সংবাদ পরিবেশনে জং সবসময়ই এগিয়ে। উর্দু সংবাদপত্রে তারাই সর্বপ্রথম বিষয়ের বৈচিত্র্য আনে। শুরু থেকেই দৈনিকটি শুক্রবারে ম্যাগাজিন আকারে একটি সাময়িকী বের করে আসছে, বিষয় ও আঙ্গিকের দিক থেকে যা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। লাখ লাখ পাঠক এখনও অপেক্ষায় থাকে জং-এর শুক্রবারের সাময়িকীটি পড়ার জন্য। বিখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীরসহ পাকিস্তানের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা এতে নিয়মিত কলাম লেখেন।
মীর খলিলুর রহমানের ছোট ছেলে মীর শাকিলুর রহমান এখন পত্রিকাটির মালিক। তিনিই জং গ্রুপের দেখভাল করছেন। পত্রিকাটির বর্তমান সম্পাদক মাহমুদ শাম।

আল আহরাম

দৈনিক আল আহরাম আরব বিশ্বের অন্যতম পুরোনো পত্রিকা। আরবি ভাষার ব্রডশিট পত্রিকা এটি। পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৫ সালে। প্রতিদিনের সার্কুলেশন দশ লাখ কপি। শুক্রবারে এর সার্কুলেশন দাঁড়ায় বার লাখ। প্রকাশক আল আহরাম পাবলিশিং হাউজ। ১৯৫২ সালের অভ্যুত্থানের পর জামাল আবদেল নাসের পত্রিকাটিকে জাতীয়করণ করেন। তা সত্ত্বেও পত্রিকাটি মিসরের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক।

১৮৭৫ সালে লেবাননের দুই ভাই বেশারা তাকিয়া ও সালিম তাকিয়া আল আহরাম প্রতিষ্ঠা করেন। তারা ওই সময় আলেকান্দ্রিয়ায় বসবাস করতেন। প্রথমে সাপ্তাহিক হিসেবে প্রতি শনিবার এটি বের হতো। কিন্তু দু’মাস পর দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

তাকিয়া ভাইয়েরা এটাকে দৈনিক পত্রিকার রূপ দেন। প্রথম দিকে পত্রিকা মিশরে ও লেবাননে ভাগ করে বিলি করা হতো। ১৮৯৯ সালের নভেম্বরে আল আহরামের কেন্দ্রীয় অফিস কায়রোতে স্থানান্তর করা হয়। ধর্মীয় সংস্কারক মুহাম্মদ আবদাহ ও জামাল আল দীন আল আফগানী প্রথম দিকের এতে লিখতেন।

আল আহরাম বর্তমানে আল আহরাম পাবলিশিং হাউস, যা মিশরের সবচেয়ে বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। পত্রিকাটি মিশরের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। সম্পাদক নিয়োগ দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পতনের পর পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতি অনেকটা পাল্টে যায়। পত্রিকাটি দীর্ঘদিন ধরে মুবারকের বিশ্বস্ত মিডিয়ারে ভূমিকা পালন করলেও তার পতনের পরদিনই বিরোধী অবস্থান নেয়।

আরব বিশ্বের জন্য এর সংস্করণ আল আহরাম আল আরাবিয়া। প্রতিদিন প্রকাশিত হয় বাহরাইন, সৌদী আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিতরণ হয় মিশর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়।

ইন্টারন্যাশনাল আরবি সংস্করণকে বলা হয় আল আহরাম আল দোয়ালি, ১৯৮৪ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। সংস্করণটি লন্ডন ও প্যারিস থেকে ছাপা হয়। বিলি হয় ইউরোপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা ও মিসরে।
আল আহরামের একটি ইংরেজি অনলাইন সংস্করণ রয়েছে English.Ahram.org.eg নামে। দুটি বিদেশী ভাষায় সাপ্তাহিক সংস্করণ রয়েছে ইংলিশ আল আহরাম উইকলি এবং ফরাসি আল আহরাম হেবদো।

আল আহরাম সম্পাদকীয় পরিষদের প্রধান লাবিব আস সিবায়ী। সম্পাদক আব্দুল আজিম হাম্মাদ।

*

*

Top