অজেয় তারুণ্যের পথচলা হোক মসৃণ

Imageএকটি দেশের মূল শক্তি তারুণ্য। তরুণরা জাগলেই জাতি জেগে ওঠে। আমাদের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে তরুণদের গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনো বিপ্লব বা সংগ্রাম সাফল্যের মুখ দেখেনি তারুণ্যের অংশগ্রহণ ছাড়া। তারুণ্যের আছে অজেয়কে জয় করার শক্তি ও সাহস। অসম্ভবকে সম্ভব করা তারুণ্যেরই কারিশমা। একটি জাতির তরুণরা যখন সুপথগামী হয় তখন সে জাতির গন্তব্য নিষ্কন্টক। আর তারুণ্যের মধ্যে আবিলতা যুক্ত হলেই জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার। স্বপ্ন দেখা ও বাস্তবায়ন তরুণদের কাজ। কিন্তু সেই তারুণ্যই যদি হারিয়ে যায় অন্ধকারের চোরাগলিতে তখন জাতির সামনে আশার কোনো আলো থাকে না।

যে তারুণ্য জাতির নির্মাতা, আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক সেই তারুণ্য কি আমাদের দেশে আছে? আজকের তরুণরা তো অন্ধকারের চোরাগলিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্লেদাক্ত তারুণ্য তো আজ পথহারা পথিক। যে সময় স্বপ্ন বোনার কথা সে সময় তরুণরা আজকাল নেশায় বুদ হয়ে আছে। নিজেকে গড়ার মহামূল্যবান মুহূর্তগুলো তো তরুণরা হেলায়খেলায় কাটিয়ে দিচ্ছে। অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রক তো আজ তারাই। দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তরুণরা নানা অন্যায়ে জড়িয়ে সমাজকে বিষিয়ে তুলছে। আজকের তরুণদের নেই কোনো টার্গেট, পথচলায় নেই কোনো আদর্শ রাহবার। বিপথগামী তারুণ্যকে সঠিক পথের দিশা দেয়ার মতো কোনো কার্যকরি উদ্যোগও তো চোখে পড়ে না। একটি জাতির স্বপ্ন ও সম্ভাবনাগুলো এভাবে তিলে তিলে বিনাশ হয়ে যেতে দেখেও কেউ এগিয়ে আসছে না।
তারুণ্য কোনো বয়সের ফ্রেমে আবদ্ধ নয়। অসম্ভবকে সম্ভব করার কৌশল; কর্মস্পৃহায় অদম্য; টার্গেট পূরণে দুর্বার পথচলায় যারা নিরন্তর তারাই তরুণ। সে হিসেবে তরুণের সংখ্যাই সমাজে বেশি হওয়ার কথা। তারুণ্যময় সমাজ তো পিছিয়ে থাকার কথা নয়। তরুণদের অংশীদারিত্ব সমাজ গতিশীল হওয়ারই কথা। কিন্তু আমাদের সমাজে তারুণ্যের ভূমিকাটা জোরালো না হওয়ায় আমরা পিছিয়ে। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান কোনো ক্ষেত্রেই জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান ততটা শক্তিশালী নয়। নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের প্রশ্নে তো আমাদের অবস্থান অনেক নিচে। তরুণদের মধ্যে নীতিবিবর্জিত ও আদর্শহীনতার যে বিষফোঁড়া গজাচ্ছে তা দিন দিন আরো বিষাক্ত হয়ে ওঠছে। অবক্ষয় ও স্খলন আমাদের সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সামাজিক পঁচন যখন তারুণ্যের মধ্যে শুরু হয় তখন তা ঠেকানোর আর কোনো রাস্তা থাকে না।

অবক্ষয়ের ধারায় ধাবমান তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতেই হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন আদর্শভিত্তিক আন্দোলন। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সব দিকেই তারুণ্যের সামনে আদর্শের বাতিঘর দরকার। প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বকালের সেরা আদর্শ তো প্রতিটি মুমিনের চলার পাথেয়। তরুণদের উত্তরণের কৌশলও এখানে নিহিত। গত হয়ে যাওয়া আদর্শ মানুষেরাও তরুণদের জন্য সহায়ক হতে পারে। আদর্শ ব্যক্তিদের অনুসরণ যত বেশি হবে তরুণদের সামনের গতিপথ ততই নিষ্কণ্টক হবে।

আজকের তারুণ্য নীড়হারা পাখির মতো। তাদের সঠিক পথের দিশা দেয়ার মতো কেউ নেই। আদর্শিক আহ্বান ও ঠিকানা না পেয়ে তরুণরা স্বভাবতই ছুটছে লক্ষ্যহীন গন্তব্যে। সাময়িক প্রাপ্তি, বৈষয়িক উন্নতিই আজকের তারুণ্যের গতিপথ নির্ণয়ের মাপকাঠি। এজন্য তারুণ্যকে পথচলায় সহায়তা করতে দরকার আরো বেশি আদর্শভিত্তিক সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। কাজের ভিন্নতা থাকলেও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে বহুমুখী সংগঠনগুলো একত্রে কাজ করতে পারে। তারুণ্যকে বিপথগামী করার জন্য চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র চলছে। সেগুলোর মোকাবেলায় ইতিবাচক ধারায় কাজ করার মতো সংগঠনের অভাব। এজন্য ইসলাম ও আদর্শভিত্তিক সংগঠনগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ, সমঝোতা ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রম আরো জোরদার করা দরকার।

Related posts

*

*

Top