অনলাইন সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ

Media-l-464x330অনলাইন সাংবাদিকতা বলতে বোঝায় ইন্টারনেট পত্রিকা বা গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা। সারা বিশ্বে আজ ইন্টারনেটভিত্তিক গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেট যত সহজলভ্য হচ্ছে ততই বাড়ছে অনলাইনের দাপট। বিশেষ করে মোবাইল ইন্টারনেটের কারণে এর পরিধি ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে। অনলাইন সাংবাদিকতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাৎক্ষণিকতা। যেকোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই রেডিও-টিভির মতো এতে প্রকাশ করা

যায়। আজ সকালে ঘটে যাওয়া খবরটি কাগজের পত্রিকার পাঠকেরা পাবেন পরদিন সকালে। আর অনলাইনের পাঠকেরা ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা পাবেন।

অনলাইনে অভ্যস্থ পাঠকরা কাগজের পত্রিকার খবরে কোনো আকর্ষণ বোধ করেন না। তাছাড়া অনলাইন সংবাদপত্রে জায়গার কোনো সমস্যা নেই। ফলে একজন অনলাইন সাংবাদিক তার স্টোরিকে বিভিন্ন তথ্যে সমৃদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারেন। আবার প্রিন্ট মিডিয়ায় একবার প্রকাশিত হয়ে গেলে তা আর সংশোধন করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু অনলাইনে এ ধরনের সমস্যা নেই। অনলাইনে অপেক্ষাকৃত কম জনবল দিয়ে, কম টাকা বিনিয়োগ করে একটি ভালো গণমাধ্যম করা যায়। কারণ এখানে ছাপাসংক্রান্ত জটিলতা ও ব্যয় নেই। একশ কোটি টাকার নিচে যেখানে মোটামুটিমানের সংবাদপত্র প্রকাশের চিন্তা করা যায় না সেখানে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ভালোমানের অনলাইন পত্রিকা করা যায়।banglades-All-News-Paper

অনলাইন সাংবাদিকতায় সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা হলো কে কার আগে সংবাদ পরিবেশ করতে পারে। কার চেয়ে কত আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারে। যারা সবার আগে সব খবর দিতে পারে তাদের সাইটেই ভিজিটর বেশি হয়। পাঠক ধরে রাখার জন্য অনলাইনে অনেক কৌশল করতে হয়। তবে তাৎক্ষণিকতার সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্যতা জরুরি। অনলাইন সংবাদপত্র একবার বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে সহজে তা ফেরাতে পারে না। বাংলাদেশের প্রথমসারির একটি অনলাইন সবার আগে চমকদার সংবাদ পরিবেশন করে, কিন্তু তাদের সংবাদের ওপর কারো বিশ্বাস নেই। দ্রুততার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে অনলাইনে প্রায়ই দেখা যায় ভুল তথ্য ও বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো অনলাইন পত্রিকা হচ্ছে। কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে কেউই কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। ফলে এর দ্বারা ক্ষতি হচ্ছে মৌলিক সাংবাদিকতার। পাঠক আকৃষ্ট করার জন্য অনেক অনলাইন পত্রিকা গুজব ছড়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নিউজ শেয়ার হওয়ায় গুজবের ডালপালা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভুল তথ্য দিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করা হলেও তাতে কেউ ভুল স্বীকার করে না। সবচেয়ে বড় হলো বিজ্ঞাপন ও নগদ অর্থের জন্য কিছু কিছু অনলাইন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাকমেইল করে। এতে অনলাইন সাংবাদিকতার প্রতি অনেকের ঘৃণা জন্মায়। কারো কারো ধারণা, অনলাইন হলো ধান্দাবাজ সাংবাদিকদের জায়গা। এ থেকে বেরিয়ে না এলে অনলাইনের প্রতি মানুষের বিরূপ ধারণা জন্মাবে।

সামগ্রিক বিচারে অনলাইন সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ ভালো। ইন্টারনেট প্রযুক্তি যত উন্নত হবে অনলাইন সাংবাদিকতার ততই প্রসার ঘটবে। বাংলাদেশে মোবাইলে ইন্টারনেট প্রযুক্তি দ্রুত উন্নতি ঘটছে। আগামী এক দশকের মধ্যে বেশির ভাগ মোবাইল ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করবে। গত এক দশক আগে কাগজের পত্রিকার যে আবেদন ছিল এখনই তা নেই তরুণ প্রজন্মের কাছে। উন্নত বিশ্বের মানুষেরা নিউজের সোর্স হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে অনলাইন। আমেরিকা ও বৃটেনের পুরানো কয়েকটি পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে হয়ত কখনো প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হবে না, কিন্তু প্রিন্টের পাঠক সংখ্যা কমে যাবে। এছাড়া ব্যাঙের ছাতার মতো যেভাবে অনলাইন পত্রিকা হচ্ছে এগুলো টিকবে না। পেশাদার অনলাইনগুলোই টিকে থাকবে। অনলাইনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে অবশ্যই এর একটি নীতিমালা প্রয়োজন।

অনলাইন সাংবাদিকতায় ইচ্ছে করলে আলেমরা ভালো করতে পারেন। তরুণ আলেমদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান মোটামুটি ভালো। লেখালেখি ও পড়াশুনাতেও তারা যথেষ্ট এগিয়ে যাচ্ছে। তবে মূলধারার মিডিয়ায় কাজ করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলের সংখ্যা কম। এছাড়া আরেকটি সমস্যা হলো, আলেমদের লেবাস-পোশাকটিকে মূলধারার মিডিয়ায় স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা হয় না। মুখে না বললেও কাজেকর্মে বুঝিয়ে দেয়, তোমরা এখানে কেন, তোমাদের জায়গা মসজিদ-মাদরাসায়।

মাদরাসাপড়ুয়া কেউ কেউ আবার মিডিয়ায় কাজ করতে গিয়ে নিজেকেই পাল্টে ফেলে। পরিবেশের আনুকূল্য না পাওয়ার কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। তবে কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক আলেমরা ইচ্ছে করলে নিজেদের মতো করে অনলাইন মিডিয়া করতে পারেন। টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও রেডিও’র চেয়ে অনলাইনে খরচ কম। অনলাইন ম্যাগাজিন ও নিউজ পোর্টালের দিকে তাদের মনোযোগী হওয়া উচিত। তবে এর জন্য পেশাদার লোক প্রয়োজন। আর পেশাদারিত্ব শিখতে হলে মূলধারার অনলাইন নিউজপেপারে কাজ করতে হবে। সংবাদপত্রের তুলনায় অনলাইনে কাজের সুযোগ বেশি। মোটামুটি পেশাদারিত্ব বজায় রাখে এবং মানেও ভালো এমন অনলাইনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তরুণরা একটু চেষ্টা করলে সেখানে কাজের সুযোগ পাবে। হীনম্মন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নেই, কাজের দক্ষতা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যায়।

Related posts

One Comment;

  1. জাহিদ মেহজাদ said:

    লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগল। বাবর ভাই! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

*

*

Top