আমরা গ্লাসের অর্ধেকটা খালি দেখি, ভরাটা দেখি না

zahirbaborবাঙালি চরিত্র বলে একটা কথা আছে। এই চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নেতিবাচক বিষয়গুলো আমাদের চোখে পড়ে বেশি। কারও মধ্যে ৮০টি গুণ আছে সেটা আমরা দেখি না; ২০টি দোষ নিয়ে তার পিছু লেগে থাকি। অর্ধেক গ্লাসে পানি আছে, আমরা বলি অর্ধেক গ্লাসই খালি। অথচ অর্ধেকটা যে ভরা সেটা আমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। আমরা গড়ার চেয়ে ভাঙায় মনোযোগী বেশি। নিজে কিছু করার সামর্থ্য রাখি আর না রাখি, অন্যের ভালো কিছু দেখলে আমাদের গাত্রদাহ হবেই। এই চরিত্রটাই জাতি হিসেবে আমাদেরকে পেছনে ফেলে রেখেছে।

দুই.

বছরপাঁচেক আগে ইসলামী ধারার লেখকদের একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তোলার জন্য আমরা কয়েকজন একটি ‘ইসলামী লেখক অভিধান’প্রণয়নের কাজে হাত দিই। সেই সময়ের একটি ঘটনা আমাকে দারুণভাবে পীড়িত করে। দেশের সবচেয়ে বড় মাদরাসাটির নিচের দিকের একজন উস্তাদ। তিনি লেখালেখি করেন, যদিও তার কোনো লেখা আমার চোখে পড়েনি। ওই মাদরাসায় আমাদের নিযুক্ত প্রতিনিধি তার কাছে লেখক অভিধানের একটি চিঠি দেন। চিঠিটি পড়ে এতে আমার নাম দেখে তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন। কারণ তিনি ওসামা বিন লাদেন নিয়ে আমার একটি লেখা নাকি অনলাইনে পড়েছেন এবং সেই লেখাটি তার ভালো লাগেনি। এর ওপর ভিত্তি করে তিনি আমার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়েন। এই লেখক অভিধানও নাকি ইহুদিদের দালালি! ইহুদিরাই নাকি টাকা-পয়সা দিয়ে এটা করাচ্ছে! এই দালালি কাজে সহযোগিতার অপরাধে ওই ছাত্রটিকে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করার হুমকিও দিলেন। ঘটনা শুনে আমি একদম থ বনে গেলাম। বাংলাদেশের বৃহৎ মাদরাসার দাবিদার প্রতিষ্ঠানটিতে এত নীচু মনের একজন উস্তাদ থাকতে পারে ভাবতে কষ্ট লাগল। শুধু তাই নয়, এত বিশাল মাদরাসার একজন শিক্ষক যে আমার মতো অতি নগণ্য একজনের ওপর ব্যক্তিগতভাবে এমন নগ্ন আক্রমণ করতে পারেন তা আমার কল্পনায়ও ছিল না। অথচ তার সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই, কোনোদিন কথাবার্তাও হয়নি।

তিন.

সেই লেখক অভিধানটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ইসলামী ধারার সাড়ে পাঁচশ লেখক জায়গা পেয়েছেন। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা অনেক লেখককে এই অভিধানে যুক্ত করতে পারিনি। আবার কিছু অলেখকও যে অভিধানে স্থান পেয়ে গেছে সেটাও আমরা অকপটে স্বীকার করেছি ভূমিকায়। আমাদের কাজের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত এক বড়ভাই বইটি প্রকাশ হওয়ার পর একটি ভরা মজলিসে সমালোচনা করেছেন। সেই মজলিসে আমরা কেউ উপস্থিত ছিলাম না এবং তার কাছে বইটি পৌঁছানো হলেও আমাদেরকে কাউকে তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। তার অভিযোগ আমরা অলেখকদের লেখক বানিয়ে দিয়েছি। বইটিতে স্থান পেয়েছে ৫৪৫ জন লেখক। সবমিলিয়ে ৪৫ জন অলেখক জায়গা পেয়ে যেতেই পারে। আরও যে ৫০০ লেখককে আমরা এক মলাটে নিয়ে এসেছি, যা ইতঃপূর্বে আর কেউ করেনি, সেই ক্রেডিট কি আমরা পেতে পারি না? ৪৫ জন অলেখকের জন্য ৫০০ জন লেখকের উপস্থিতির কোনোই মূল্য নেই? কোনো ভালো কাজ করে মানুষ যখন এর জন্য মূল্যায়ন পায় না তখন তার থেকে ভালো কাজের উৎসাহ হারিয়ে যায়। এটা মানুষের সহজাত প্রকৃতি। আমাদের জাতিগত চরিত্রের কারণে কত ভালো কাজ যে অঙ্কুরেই হারিয়ে যায়, ডাল-পালা বিস্তারের আগেই কত স্বপ্নের যে অপমৃত্যু ঘটে এর কোনো ইয়ত্তা নেই।

গেন্ডারিয়া, ঢাকা

১১.০৩.২০১৬

Related posts

*

*

Top