আলেমরা কি স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন?

আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা। একদিন আমরা ছিলাম পরাধীন, শাসন করতো ভিনদেশীরা। অনেক সংগ্রাম-সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষার পর ‘স্বাধীনতা’ নামক সূর্যটি আমরা ছিনিয়ে এনেছি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় সম্পদ। বিশ্বের বুকে আমরা আজ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাগরিক-এটাই আমাদের গর্ব। নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণী-পেশার নয়, মুক্তিযুদ্ধ এদেশের প্রতিটি নাগরিকের অহঙ্কার। যেকোনো দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং প্রয়াসের দরকার পড়ে। আমাদের মুক্তিসংগ্রামে যে চড়ামূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে এতে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ না থাকলে সফল হওয়া সম্ভব ছিল না। অন্য সবার কথা আলোচিত হলেও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে আলেমসমাজের অংশগ্রহণের কথা তেমন আলোচিত হয় না। এ প্রসঙ্গটি আমাদের কাছে ধূসর কিংবা স্পর্শকাতর বলে অনালোচিত ও অনুক্ত থেকে যায়। আলেম বলতেই মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশ করা সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই মনোভাবের কারণে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তাদের প্রতি আমাদের ব্যক্ত ও অব্যক্ত কিছু ঘৃণা প্রকাশ পায়। পুরো আলেমসমাজকেই স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের প্রতি অযাচিত আচরণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে আলেমসমাজের নাম এলে অনেকেই নাক সিটকায়। ধর্মীয়ভাবে সর্বজনবিদিত আলেমসমাজের প্রতি জাতীয় পর্যায়ের এই ধ্যান-ধারণা প্রকৃত বিচারে কতটুকু বাস্তব তা যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ অপরাধের দায় এবং তুচ্ছতার গ্লানি একতরফাভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়াটা অন্যায়। সংশ্লিষ্টতাহীন কোনো অনাচারের দায় যাচাই-বাছাই ছাড়া যে কারো কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার পরিণাম শুভ হয় না। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী আলেম প্রজন্ম, যাদের জন্মই মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে, তাদের প্রতি অবাঞ্ছিত ইঙ্গিত করা কি অন্যায় নয়? আমাদের মুক্তিসংগ্রামে সবার অবদান সমান ছিল না এ কথা ধ্রুব সত্য। এ ক্ষেত্রে আলেমসমাজের অবদান কিংবা অংশগ্রহণ আশানুরূপ ছিল না-এটা স্বীকার করে নিতেও কারো কুন্ঠিত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই সীমিত অবদানকে তুচ্ছ করা এবং তাদের সংশ্লিষ্টতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বসা বড় ধরনের অবিচার। এটা জলজ্যান্ত কোনো সত্যকে গলা টিপে হত্যা করারই নামান্তর। এদেশের খ্যাতিমান অনেক বুদ্ধিজীবী-প-িতও স্বাধীনতাকে সমর্থন করেননি, পাকিস্তান সরকারের আনুগত্য করে চাকরি করেছেন। পরবর্তী সময়ে তারা স্বাধীন বাংলাদেশে চলে এসেছেন, এদেশের পক্ষে কাজ করেছেন। কেউ তো তাদের প্রতি বাঁকা চোখে তাকায় না! স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে তারা তো চিহ্নিত হন না। শুধু লেবাস-পোশাকের কারণে আলেমরা কেন স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পরিচিত হবেন? আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বিশাল না হলেও নগণ্য নয়। এদেশের আনাচে-কানাচে এখনো অনেক আলেম খুঁজে পাওয়া যায় যারা নিজেদের জীবনবাজি রেখে সরাসরি সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেছেন। দেশমাতৃকার টানে মুক্তিসেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। ‘রাত তখন পৌনে একটা। শুরু হলো প্রচ- গোলাগুলি। আকাশ রক্ত বর্ণ হয়ে উঠছে আগুনের লেলিহার শিখায়। ঘন ঘন ফাটছে কামানের শেল। পাকিস্তানি ফৌজ অতর্কিত হানা দিয়েছে আমাদের ক্যাম্পে। মাথার ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই ছুটছে গুলি। আমরা টিলার গর্তে ঢুকে, গাছের আড়ালে থেকে গড়ে তুললাম তুমুল প্রতিরোধ। ঘণ্টা দেড়েকের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আমরা সফল হলাম। ইতোমধ্যে তাদের কয়েকজন খতমও হয়ে গেলো।’ একজন আলেমের স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে উদ্ধৃতাংশটি। তিনি সম্মুখসমরে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন নয় মাস। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন একাধিক আলেম। মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণ করেছেন জানা-অজানা এমন আলেমের সংখ্যা কম নয়। ডা. মাওলানা অলিউর রহমানের কথা আমরা জানি। তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিজীবী আলেম। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথমসারির বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তাকেও হত্যা করা হয়। পটিয়া মাদরাসার প্রবীণ উস্তাদ ছিলেন আল্লামা দানেশ রহ.। পটিয়া মাদরাসায় পাক সেনাদের গোলা বর্ষণে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী, তার ভাই মাওলানা উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা মুস্তাফিজ (হাতিয়া), মাওলানা আব্দুস সোবহান (মুহাদ্দিস), মাওলানা আবু ইসহাক (রাঙ্গুনিয়া), মাওলানা ইমদাদুল হক আড়াইহাজারী, মাওলানা দলিলুর রহমান (চন্দ্রঘোনা), মাওলানা মতিউর রহমান (রানীরহাট), মাওলানা আব্দুল মতিন কাজী, মাওলানা আমজাদ হোসেন (নাগেশ্বর), মাওলানা কামরুামান (নরসিংদী), মাওলানা বজলুর রহমান, মাওলানা বশির উদ্দীন, মাওলানা মুখলিস (চান্দিনা) প্রমুখ আলেম সরাসরি রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন। তাদের অনেক গৌরবগাথার কথা মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র এবং তাদের নিজেদের স্মৃতিকথায় পাই। উদাহরণ হিসেবে এখানে অল্প কয়েকজন আলেম মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছেন অনেক আলেম মুক্তিযোদ্ধা। তাদের অনেকের নামও আমরা জানি না, অনেকেই ইতোমধ্যে দুনিয়া থেকে বিদায়ও নিয়ে গেছেন। আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের স্বতন্ত্র কোনো তালিকা কোথাও সংরক্ষিত নেই। এজন্য প্রকৃত বাস্তবতাটা আমাদের সামনে আসে না। সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়া আলেমদের বাইরেও একটি বিশাল শ্রেণী আছেন যারা নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। সারাদেশে মসজিদ, মাদরাসা ও খানকায় ছড়িয়ে থাকা আলেমরা সাধ্যানুযায়ী মুক্তি সংগ্রামে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতার কারণে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ না পেলেও স্ব স্ব অবস্থান থেকে মুক্তিসংগ্রামকে সাফল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে তাদের আকুলতার কোনো কমতি ছিল না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইমাম সাহেবের হুজরা কিংবা পীর সাহেবের খানকায় আশ্রয়ে থেকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন অনেক যোদ্ধা। অনেক আলেম নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুরক্ষিত রেখেছেন মুক্তি-ফৌজদের। প্রয়োজনে পাকসেনাদের সঙ্গে ভাব গড়ে তোলে ফায়দা লুটেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। আর কিছু না হোক, জোরালো সমর্থন, ঐকান্তিক কামনা এবং আন্তরিক দুআর দ্বারা প্রত্যেক আলেমই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের মনোবল চাঙ্গা করা, ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা, যুদ্ধরত সৈনিকদের সেবা-শশ্রুষা, তাদের পারিবারিক খোঁজ-খবর নেয়াÑমুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট এসব অধ্যায় থেকে কোনো আলেমই বিচ্ছিন্ন ছিলেন না। এ হিসেবে আলেমদের সিংহভাগই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস শুধুই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নয়। বৃটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে প্রায় দুইশ বছরের যে সংগ্রাম এর পরতে পরতে রয়েছে ওলামায়ে কেরামের অভূতপূর্ব ভূমিকা। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পূর্ণতা পাবে না বালাকোট, রেশমি রুমাল, সিপাহী বিদ্রোহ, দারুল উলূম দেওবন্দ আন্দোলন প্রভৃতি ছাড়া। আর এর সবগুলোতেই রয়েছে ওলামায়ে কেরামের স্বর্ণোজ্জ্বল ভূমিকা। ইংরেজবিরোধী ভূমিকার জন্য খুদিরাম যদি ইতিহাসে বীরসেনানী হিসেবে অমর হয়ে থাকেন তবে এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখা শত শত ওলামায়ে কেরামের নাম কেন অনালোচিত থাকে। ‘অমুক-তমুকের’ জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না যেমন সত্য তেমনি ইংরেজদের বিতাড়িত না করলেও এদেশ স্বাধীন হতো না-এটাও সত্য।  ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ না হলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নাম রাষ্ট্রের যে জন্ম হতো না সেটাও তো ধ্রুব সত্য। সুতরাং স্বাধীনতা সংগ্রামের খ-িত ইতিহাস দিয়ে আলেম-ওলামার অবদান মূল্যায়ন করা তাদের প্রতি অবিচার। উপনিবেশমুক্ত নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের নেতৃত্বে যারা ছিলেন, যারা ইসলামী রাষ্ট্রের টোপ দিয়ে জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন, তাদের মধ্যে ইসলামের কোনো বালাই ছিল না। ইসলামের লেভেল এঁটে ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনই ছিল তাদের প্রধান মনোবাঞ্ছা। তাদের মোহাচ্ছন্ন জালে আটকা পড়ে যায় ওলামায়ে কেরামের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। আলেমদের যে অংশটি তখন পাকিন্তান রাষ্ট্রের বিভাজন সমর্থন করেননি, তারাও মুক্তিযোদ্ধা কিংবা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেননি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়টা অনেকের কেটেছে সিদ্ধান্তহীনতা ও ইতস্ততার ঘোরের মধ্যে। বিবেক ও পারিপার্শ্বিকতার টানাপোড়েন তাদের স্বতঃস্ফূর্ততার সুযোগ করে দেয়নি। যারা সব আড়ষ্টতা কেটে বিবেকের ডাকে সাড়া দিতে পেরেছেন তারাই ছুটে গেছেন রণাঙ্গনে, জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ে। তাছাড়া বাস্তবতা হলো, সব বাধা-বিঘœ এড়িয়ে সবার একসঙ্গে রণাঙ্গণে চলে যাওয়াটাও অসম্ভব। আর এটা যুদ্ধকৌশলেরও পরিপন্থী। এজন্যই দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রায় সাত কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র কয়েক লাখ ছিলেন মাঠ পর্যায়ের সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা। তবে বাকিরা মুক্তিযুদ্ধ প্রক্রিয়ার বাইরে ছিলেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপক্ষে কিংবা দেশের স্বাধীনতার অনুকূলে কোনো না কোনো ভূমিকা মোটামুটি সবারই ছিল। সাধারণ এ বিশ্লেষণপ্রক্রিয়া আলেমদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তারাও সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। এ দৃষ্টিকোণে মুক্তিসংগ্রামে ওলামায়ে কেরামের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা ভাস্বর হয়ে ওঠে। অবাঞ্ছিত কিছু অপরাধমূলক কার্যক্রমের যে অভিযোগের তীর আলেমদের ওপর বিদ্ধ করা হয় এটা সত্যিকার কোনো আলেমের কাজ নয়। সুযোগসন্ধানী একটি শ্রেণী আলেমের লেবাস গায়ে ঝুলিয়ে কিংবা জোর করে আলেম উপাধী ধারণ করে নানান অন্যায়-অনাচার ও অপকর্ম চালিয়েছে। অনেক আলেমও সুবিধাভোগী হিং¯্র এ শ্রেণীটির শিকারে পরিণত হয়েছেন। সীমিত আয়তনের জনবসতিপূর্ণ এ ভূখ-ে কারো অপরিচিত কেউ নন। সুতরাং কারা তখন আলেম বেশ ধারণ করে এসব অপকর্ম চালিয়েছিল তা কারো জানার বাইরে নয়। সে শ্রেণীটির অস্তিÍত্ব¡ এখনও আছে। তাদের সঙ্গে কোনো প্রকৃত আলেমের যোগসূত্রতা তখন যেমন ছিল না, এখনও নেই। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে সে সময় তারা যেমন ধিকৃত ও ঘৃণিত হয়েছিল এখনও হচ্ছে। এজন্য তাদের দায় নিষ্কলুষ ইমেজ ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী, জাতীয় ও ধর্মীয় অভিভাবক ওলামায়ে কেরামের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অশুভ প্রবণতা থেকে আমাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতপক্ষে কোনো আলেম দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী হতে পারেন না। কারণ যে ইসলামের দীক্ষায় তারা দীক্ষিত, সে ইসলাম মাতৃভূমি রক্ষার জোর তাগিদ দিয়েছে। দেশপ্রেমকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়ার অনুপ্রেরণা ইসলামে রয়েছে। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও চরিত্রে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল নজীর চিরভাস্বর হয়ে আছে। তিনি যখন স্বজাতিকর্তৃক বিতাড়িত হয়ে মদিনার পথে হিজরত করেন, তখন বার বার মক্কার দিকে তাকাচ্ছিলেন আর কাতর কণ্ঠে আফসোস করে বলছিলেন, ‘হে আমার স্বদেশ, তুমি কতই না সুন্দর! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার আপন জাতি যদি ষড়যন্ত্র না করতো আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’ মদিনায় হিজরত করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাকেই নিজের মাতৃভূমি হিসেবে গণ্য করেন। এর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ইসলামী চেতনায় যারা বলীয়ান, বিবেকের দায়বোধে যারা দগ্ধ, তারা দেশ ও জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি নিবেদিত। মুক্তিসংগ্রামে আলেমসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক অংশগ্রহণ না থাকলেও দেশগড়া এবং দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য তাদের চেষ্টা, শ্রম ও আকুলতা কোনো অংশে কম নয়। যেকোনো দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ যত না গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব রাখে দেশ গঠনে অংশিদারিত্ব। আর এক্ষেত্রে আলেমদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। তারা নিজেদের অবস্থান থেকে দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য সাধ্যানুযায়ী ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। সৎ, আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষায় পুষ্ট জাতি গঠনে তাদের অবদানই সর্বাগ্রে। আলেম-ওলামা স্বদেশ প্রেম ও দেশের প্রতি আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। সুতরাং আলেম-ওলামা প্রতি স্বাধীনতাবিরোধী ইঙ্গিত অশুভ পাঁয়তারারই অংশ। সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের উচিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব অপপ্রচার থেকে বেঁচে থাকা।

*

*

Top