আলোর মিনার

zahirbabor 2 (1)চৌদ্দশত বছর আগের পৃথিবীর দিকে একটু নজর দিন। উঁচু উঁচু দালান-কোটা, সোনা-দানার বাহার আর চাকচিক্যময় পোশাক-আশাকের কথা একটু ভুলে যান। এসব তো পুরোনো ছবিতে আর জাদুঘরেও দেখা যায়। দেখার বিষয় হলো মানবতা কখন জেগে উঠেছে পূর্ব থেকে পশ্চিম; উত্তর থেকে দক্ষিণে। একটু ভালোভাবে তাকিয়ে দেখুন মানবতার হৃদকম্পন অনুভব হয় কিনা!
জীবনসমুদ্রে কখনও বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়েছে; মানব-অরণ্যে কখনও বাঘ ও চিতা, শূকর ও ভেড়া ছাগল ও মেষকে খেয়েছে। অসততা নিষ্ঠার ওপর, অভদ্রতা ভদ্রতার ওপর, প্রবৃত্তি প্রজ্ঞার ওপর, পেটের চাহিদা রূহের চাহিদার ওপর প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু এই অবস্থার বিরুদ্ধে এত দীর্ঘ স্থানে প্রতিরোধ আর কখনও ছিল না। মানবতার প্রশস্ত কপালে রাগের কোনো চিহ্ন কখনও চোখে পড়েনি। সারা দুনিয়া নিলামের একটি ডিবিতে পরিণত হয়েছিল। বাদশা-উজির, ধনী-গরিব সবার দাম নির্ণয় হচ্ছিল এই বাজারে। সবাই কুড়ি হিসেবে বিক্রি হচ্ছিল। এমন কেউ ছিল না যার মানবতার হিরকমূল্য ক্রেতাদের সামর্থ্যরে ঊর্ধ্বে ছিল। এমন কেউ ছিল না যিনি হাঁক ছেড়ে বলবেন, এই সবকিছু আমার একটি খুঁটির মূল্যের জন্যও যথেষ্ট নয়। এই পুরো দুনিয়া এবং গোটা জীবন আমার মূল্যমানের চেয়ে কম। কারণ একটি অনন্ত জীবন আমার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি এই ক্ষীয়মান জীবন এবং সীমিত দুনিয়ার খ-িতাংশের জন্য আমার রূহকে কিভাবে বিক্রি করে দিতে পারি!
জাতি ও দেশ, বংশ ও ভ্রাতৃত্ব এবং গোত্রগুলো ছোট ছোট খেলনা-ঘরে পরিণত হয়েছিল। বড় বড় হিম্মতওয়ালা মানুষ যারা নিজেদের বড়ত্বের দাবিদার ছিল তারাও ওই খেলনা ঘরেই গুটিয়ে নিয়েছিল নিজেদেরকে। এটা কারো কাছে সঙ্কীর্ণ বলে মনে হয়নি। এর চেয়ে প্রশস্ত মানবতার চিন্তা কারো মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না। জীবনের সব স্বাদ-আহ্লাদ, ভোগ-বিলাস একটি ধোঁকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
তখন মানবতা ছিল একটি নিথর লাশ। এর মধ্যে ছিল না কোনো প্রাণের অস্তিত্ব, হৃদয়ের উত্তাপ ও ভালোবাসার উঞ্চতা। মানবতার ওপর ঝেঁকে বসেছিল পাশবিকতা। চারদিকে আচ্ছন্ন ছিল অরণ্যে, যার মধ্যে ছিল হিংস্র নেকড়ে আর বিষাক্ত পোকা। অথবা ছিল ঘাস যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল রক্তচোষা জোঁক। ওই অরণ্যে ছিল সব ধরনের হিংস্র প্রাণীর বাস। তবে মানবতার ওই বস্তিতে কোনো মানুষ চোখে পড়তো না। যারা মানুষ ছিল তারা কোনো পর্দার আড়ালে, পাহাড়ের চূড়ায় অথবা ইবাদতের খানকায় লুকিয়ে থাকতো এবং শুধুই নিজের মঙ্গল কামনা করতো। তারা জীবনের ক্যাম্পাসে থেকে জীবনের চোখ বন্ধ করে দর্শনের সঙ্গে নিজের অন্তরকে লাগিয়ে রাখতো। অথবা কাব্য করে নিজের চিন্তা ভোলার চেষ্টা করতো। জীবনের আঙ্গিনায় ছিল না কোনো পৌরষত্বের চিহ্ন।
হঠাৎ মানবতার এই নিথর লাশে উঞ্চ রক্তের ধারা উৎলে উঠলো। প্রাণে স্পন্দন আর গায়ে কম্পন সৃষ্টি হলো। যেসব পাখি তাদেরকে মৃত মনে করে লাশের গায়ে নিজেদের বাসা তৈরি করেছিল তারা হঠাৎ অনুভব করলো বাসা নড়ে উঠেছে, শরীরও দুলছে। প্রাচীন ঐতিহাসিকরা এই অবস্থাটির কথা এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, রোম সম্রাটের সিংহাসনের পাথর খসে পড়লো আর পারস্য সাম্রাজ্যের অনির্বাণ শিখা নিভে গেল। বর্তমান সময়ের ঐতিহাসিকরা এটাকে এভাবে বর্ণনা করবেন যে, মানবতার আভ্যন্তরীণ এই নড়াচড়ায় তাদের বাইরের অংশে ধাক্কা খেলো। তাদের নিথর অস্তিত্ব যে দুর্বল ও নড়বড়ে দুর্গ হয়ে পড়েছিল তাতে নড়াচড়ার সৃষ্টি হলো। মাকড়সার প্রতিটি জাল বিদীর্ণ হলো, নড়বড়ে বাসাগুলো ভেঙে পড়লো। মাটির নিচের নড়াচড়ায় (ভূমিকম্পন) যদি ইট-পাথরের দালানগুলো টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে; লোহা আর শিশার প্রাসাদগুলো ভেঙে গাছের পাতার মতো ঝরে পড়ে তাহলে একজন নবীর আগমণে রোম ও পারস্য সম্রাটের মানবরচিত বিধানে যেন কম্পন সৃষ্টি হবে না! জীবনের এই উঞ্চ রক্ত যে মহামানবের শরীর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। তাঁর জন্মের মাধ্যমেই এসব ঘটনা ঘটে; যা সভ্য দুনিয়ার প্রাণ মক্কা মুয়াজ্জমায় সংঘটিত হয়।
রাসুলুল্লাহ সা. দুনিয়াকে যে পয়গাম দিয়েছেন এর সংক্ষিপ্ত কথাগুলো জীবনের সব বিস্তৃত প্রাঙ্গণকে পরিবেষ্টিত করে। ইতিহাস সাক্ষী মানবজীবনের ভিত্তি এবং এর স্তম্ভগুলো কখনও এত জোরে ধাক্কা দিতে পারেনি যা দিয়েছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর ঘোষণা। দুনিয়ার মস্তিষ্কে এমন ছাপ আর কোনোকিছুই রাখতে পারেনি যা এই কয়েকটি শব্দ রেখেছ। তারা রাগে ফেটে পড়তেন আর কঠোর ভাষায় ঘোষণা করতেন, ‘আমরা কি ওই মাবুদদের যাদের ইবাদত করতাম তাদের বাদ দিয়ে এক মাবুদকে গ্রহণ করবো! এটা তো খুবই বিস্ময়ের কথা।’ ওই মস্তিষ্কের মানুষেরা সিদ্ধান্ত নিলেন, আমাদের জীবনব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি সূক্ষ্ম ও সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আমাদেরকে এর মোকাবেলা করতে হবে। তাদের সরদার ও দায়িত্বশীলরা পরস্পরের কাছে গেলেন এবং বললেন, চল আমরা আমাদের প্রভুদের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকি। এটা তো একটি স্বতসিদ্ধ বিষয়।
zahirbabor 2 (2)লা ইলাহার এই ঘোষণা জীবন ও মানবতার পুরো অস্তিত্বে একটি বড় ধরনের আঘাত। এটা মস্তিষ্কের চিন্তাধারা এবং জীবনপ্রণালীর পুরো ছাঁচকে প্রভাবিত করেছিল। তাদের ধারণা ছিল যা আজও মনে করা হয়, এই দুনিয়া কোনো অরণ্য নয়, বরং এটা মালির লাগানো একটি সুসজ্জিত বাগান। আর মানুষ হলো এই বাগানের সবচেয়ে সুসজ্জিত ফুল। এই ফুল উদ্দেশ্যহীন জন্মানো হয়নি। তেমনি মানুষ অমূল্য প্রাণি, তবে তা স্রষ্টাকে ছাড়া কোনো মূল্য রাখে না। তাদের ভেতরে ওই লাগামহীন প্রত্যাশা, উচ্চাভিলাস, প্রাপ্তির আকুতি এবং দোদুল্যমান একটি অন্তর আছে যাকে সারা দুনিয়া মিলেও শান্ত করতে পারে না। এই নিথর উপকরণের দুনিয়া এর সঙ্গে যায় না। এর জন্য দরকার অমর জীবন আর সীমাহীন একটি দুনিয়া; যার সামনে এই জীবন একটি বিন্দু সমপরিমাণ আর এই দুনিয়া শিশুদের খেলনার মতোই সাময়িক। সেখানকার আরাম-আয়েশের সঙ্গে এখানকার আরাম-আয়েশ, সেখানকার কষ্টের সঙ্গে এখানকার কোনো কষ্টের তুলনা কোনোই বাস্তবতা রাখে না।
এজন্য মানুষের প্রকৃতিগত প্রবৃত্তি হলো এক আল্লাহর ইবাদত। তাঁকে চেনা, তাঁর সন্তুষ্টির অন্বেষা এবং সারা জীবন তাঁকে প্রাপ্তির সাধনা। মানুষের জন্য কোনো প্রাণী, কোনো অদৃশ্য বা দৃশ্যমান শক্তির, কোনো গাছগাছালি, পাথর, জড়পদার্থ, ধনসম্পদ, কোনো সম্মান-প্রতিপত্তির সামনে গোলামের মতো মাথা নুইয়ে দেয়া অথবা উদ্ভিদের মতো দলিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা শুধু এক সত্তার সামনে মাথা নত করবে যিনি সবচেয়ে উচ্চ, সমস্ত জগত যার খাদেম। মানুষের সামনে ফেরেশতাদের সেজদা করিয়ে এবং তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা নত করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এটা প্রমাণ করেছেন যে, জগতের সব শক্তি যে ফেরেশতাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় সেই ফেরেশতারা মানুষের সামনে মাথা নথ করে আছে আর মানুষেরা এর জবাবে একমাত্র আল্লাহর সামনে নতশির।
ইসলামপূর্ব সেই যুগে দুনিয়ার মস্তিষ্ক এতটাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল যে, পদার্থ ও জড়, পেট ও পিঠের সীমার বাইরে সহজে কাজ করতে পারতো না। মানুষের মন-মস্তিষ্ক এতটাই উতলা হয়ে গিয়েছিল যে, তারা কোনো মানুষ সম্পর্কে একটু গভীর ও উন্নতভাবে চিন্তাই করতে পারতো না। তারা কিছু পরিমাপক বানিয়ে রেখেছিল, সবাইকে সেই পরিমাপে মাপতো। জীবনের যে ছোট ছোট বৈষয়িক উচ্চতাগুলো আছে সব উঁচুস্তরের মানুষদের এর সামনে নিয়ে যাচাই করতো।
তারা অত্যন্ত ভেবে-চিন্তে এবং খুবই বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ আঞ্জাম দিলো। তারা রাসূল সা. সম্পর্কেও ভাবলো হয়ত তিনি ধন-সম্পদের জন্য, অথবা সাম্রাজ্য ও রাজত্বের জন্য অথবা তিনি আরাম-আয়েশের প্রত্যাশী। একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখবেন, ওই সময়কার দুনিয়ার অভিজ্ঞতা এর চেয়ে বেশি আর কী ছিল। তারা সে সময়ের উচ্চাবিলাসী ও রাজকীয়তার উদাহরণ এর চেয়ে বেড়ে আর কী দেখেছিল! তারা রাসূলুল্লাহ সা.-এর দরবারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠালো। এটা ছিল মূলত ওই সময়ের মন-মানসিকতা, মস্তিষ্কের ঊর্বরতা এবং প্রবৃত্তির যথার্থ প্রতিনিধিত্বের নমুনা। তারা যা কিছু বলেছেন তা ছিল মূলত ওই সময়কে ধারণের যথার্থ প্রতিনিধিত্ব। আর রাসূল সা. তাদেরকে যে জবাব দিয়েছিলেন তা ছিল নবুওয়াতের সঠিক প্রতিনিধিত্ব এবং উম্মতে মুসলিমার স্বরূপের বহিঃপ্রকাশ।
রাসূল সা. এটা প্রমাণ করে দেন, মূলত  তিনি এসবের কোনোটির প্রত্যাশী নন। তিনি যা চান তা তাদের উপস্থাপিত উন্নত জিনিসের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত; যেমন পার্থক্য আসমান আর জমিনের মধ্যে। তিনি ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ ও উন্নতির প্রত্যাশী ছিলেন না, বরং গোটা মানবতার সুখ-সমৃদ্ধির জন্যই ছিলেন অস্থির। তিনি এই ক্ষণস্থায়ী পার্থিব দুনিয়ায় বানানো জান্নাতের প্রত্যাশী ছিলেন না; বরং জান্নাত থেকে বের হওয়া মানুষগুলোকে চিরস্থায়ী জান্নাতে অনন্তকালের জন্য ঢোকাতে চাচ্ছিলেন। তিনি কোনো নেতৃত্বের প্রত্যাশী ছিলেন না, বরং সমগ্র মানবতাকে মানুষের দাসত্ব থেকে বের করে প্রকৃত প্রভুর দাসত্বে নিয়োজিত করতে চেয়েছিলেন। এই ভিত্তির ওপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই উম্মত, আর এই পয়গাম নিয়েই তারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসলামের দূতেরা নিজেদের মধ্যে দাওয়াতের প্রকৃত প্রাণ এবং এর সঠিক জীবনধারা বহন করেন। তারা রোম ও পারস্য সম্রাটের মতো দরবারেও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আল্লাহ আমাদেরকে এই কাজের জন্য নির্বাচিত করেছেন যে, আমরা তার বান্দাদেরকে বান্দার দাসত্ব থেকে বের করে আল্লাহর গোলামিতে নিযুক্ত করবো। দুনিয়ার সঙ্কীর্ণতা থেকে বের করে পরকালের বিশালতার এবং ধর্মীয় অনাচার থেকে বের করে ইসলামের ন্যায় ও সাম্যের মধ্যে প্রবেশ করাবো। তাদের যখন নিজেদের মূলনীতির ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা এবং চালানোর সুযোগ মিলল তখন তারা যা কিছু বলতেন এবং অন্যদের দাওয়াত দিতেন তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন।
তাদের আদর্শিক সেই রাজত্বকালে কোনো মানুষের দাসত্ব হতো না, বরং আল্লাহর দাসত্ব হতো। কোনো মানুষ বা সম্প্রদায়ের নির্দেশ চলতো না; বরং আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন হতো। তাদের সেই রাজত্ব যাকে তারা খলিফা বলে অভিহিত করেন; সামান্য মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে জেগে উঠতো আর বলতো, তারা মায়ের পেট থেকে স্বাধীন হয়ে জন্ম লাভ করেছে, তোমরা তাদেরকে কেন গোলাম বানাচ্ছো? তারা বড় বড় বিচারক, শাসক হওয়া সত্ত্বেও এমনভাবে জীবনযাপন করতেন যে, রাস্তাঘাটে লোকেরা তাদেরকে মজদুর মনে করে বোঝা টানার দায়িত্ব দিতো এবং তারা তা যথারীতি বাড়ি পৌঁছে দিতেন। তাদের মধ্যে বিরাট ধনসম্পদের অধিকারীরাও এমনভাবে জীবনযাপন করতেন তারা যেমন জীবনকে জীবন আর আরাম-আয়েশকে কোনো আরাম-আয়েশ মনে করছেন না। কারণ তাদের নজর তো অন্য আরেক জীবনের ওপর। তাদের প্রত্যাশা তো হলো অন্য কোনো আরাম-আয়েশ।
দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে বস্তুবাদ এবং শারীরিক উপভোগ্যের বাইরে একটি ভিন্ন বাস্তবতার ঘোষণা দিতে এই উম্মতের অস্তিত্ব। এর প্রতিটি সদস্য জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত এই বাস্তবতার ঘোষণা দেয়, দুনিয়ার সব শক্তির চেয়ে বেড়ে আরেকটি শক্তি আছে; এই জগতের চেয়ে আরো বাস্তব একটি জগত আছে। তারা যখন দুনিয়াতে আগমন করেন তখন তাদের কানে সেই আহ্বানই ধ্বনিত হয়। তারা যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নেন তখনও কালেমায়ে শাহাদতের সঙ্গে বিদায় নেন। তারা যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকেন তখনও জন্মের সময়ের সেই আজান তাদেরকে পথ দেখায়। পেট-পিঠের এই শারীরিক গঠন ছাড়াও তাদের সামনে একটি উজ্জ্বল বাস্তবতা অপেক্ষা করছে। আর এটাই হলো সাফল্যের পথ। বাজারের শোরগোল তাদের সামনে নিথর-নিস্তব্ধ হয়ে যায় আজানের সুরে। আল্লাহর বান্দারা এই আহ্বানে মোহিত হয়ে যান। রাতে যখন এই পৃথিবী ঘুমে বিভোর, সারা দুনিয়া যখন মৃত্যুপুরী তখন তারা জেগে জেগে জীবনের ঝর্ণাধারা এমনভাবে প্রবাহিত করেন যেমন রাতের অন্ধকার বিদূরিত হয়ে যায় সকালের সূর্য দ্বারা। ‘আসসালাতু খায়রুন নাউম’ ঘুমের চেয়ে নামায উত্তম এই আহ্বানে ঘুমন্ত মানবতার মধ্যে জীবনের পয়গাম ছড়িয়ে পড়ে। শক্তিশালী কোনো রাজা-বাদশা যখন উদ্ধত্যের চরম সীমায় পৌঁছে ‘আমি তোমাদের সবচেয়ে বড় প্রভু’ অথবা ‘আমি ছাড়া তোমাদের আর কোনো প্রভু নেই’ এই স্লোগান দেয় তখন একজন দরিদ্র-অসহায় মুয়াজ্জিন ‘আল্লাহু আকবার’ আল্লাহ সবচেয়ে বড় বলে ঘোষণা করে তাদের দাবিতে চপেটাঘাত করেন। আর ‘আশহাদুআল্লাহ ইলাহা’ বলে প্রকৃত ¯্রষ্টার ঘোষণা দেয়। এভাবেই দুনিয়ার প্রকৃতি অসামঞ্জস্যতা থেকে রক্ষা পায়।
এই পরিচিতি, ঈমান ও ঘোষণার ঝর্ণাধারা হলো মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত এবং তার তালিম ও দাওয়াত। এখন এই পরিচিত, ঈমান ও এলানই হলো দুনিয়ার নতুন জীবনের ঝর্ণাধারা। আর সঠিক ও যথোপযুক্ত বিপ্লবের এটাই হলো একমাত্র পথ।
মূল: আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.; অনুবাদ: জহির উদ্দিন বাবর

*

*

Top