পাঠকের চাহিদা ও ইসলামি বইয়ের মেলা

জহির উদ্দিন বাবর
বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস দুশো বছরের বেশি। এর মধ্যে প্রায় দেড়শ বছর এমন কেটেছে যখন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের জন্য পঠনপাঠনের তেমন কোনো উপকরণই ছিল না। মুসলিম সমাজে এক দিকে ছিল শিক্ষা-দীক্ষার অভাব, অন্যদিকে ইসলামকে জানতে ছিল না তেমন কোনো লিখনি। এটা লম্বা সময় পর্যন্ত এই ভূখণ্ডের মানুষ ইসলামি বই বলতে ভিত্তিহীন বারো চাঁদের ফজিলত, নিয়ামুল কুরআন ও মোকসেদুল মোমেনীনকেই বুঝতো। পরবর্তী সময়ে বেহেশতি জেওরের বাংলা অনুবাদ হলে এটি কিছুটা প্রয়োজন পূরণ করে। যদিও বাংলা সাহিত্যে ইসলামি ধারায় উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো সাহিত্য ছিল না দীর্ঘদিন। সম্ভবত আশির দশকে প্রথম ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে কিছু নির্ভরযোগ্য বইপত্র বের হয়। এরপর নব্বইয়ের দশকে ইসলামি ধারার লেখালেখিতে কিছুটা জোয়ার আসে।

তবে ২০০০ সালপরবর্তী সময়ে গত ২০/২২ বছরে ইসলামি ধারার লেখালেখির অঙ্গনে মোটামুটি একটি বিপ্লব ঘটে গেছে। বিশেষ করে গত এক যুগে যত ইসলামি বইপত্র বের হয়েছে তা এর আগের এক হাজার বছরেও বের হয়নি। এখন ইসলামি ধারার বইয়ের জগৎ অনেক সমৃদ্ধ। প্রতি মাসে মৌলিক ও অনূদিত শত শত বইপত্র বের হচ্ছে। বাংলাবাজারে ইসলামি টাওয়ার, কওমি মার্কেট নামে দুটি স্বতন্ত্র মার্কেট প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর বাইরেও আছে ইসলামি বইয়ের অগণিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ঢাকাসহ সারাদেশেই ইসলামি বইপত্র প্রকাশের একটা গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এখন আলহামদুলিল্লাহ ইসলাম সম্পর্কে কেউ জানতে চাইলে অন্তত পঠনপাঠন সামগ্রীর কোনো অভাব অনুভূত হয় না। যদিও মানের বিচারে যতটা অগ্রসর হওয়ার কথা ছিল সেই পর্যায়ে এখনও ইসলামি ধারার লেখালেখি পৌঁছাতে পারেনি। আশার কথা হলো, মানসম্পন্ন বইপত্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়িই মানের বিচারেও ইসলামি ধারার শিল্প-সাহিত্য একটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছতে সক্ষম হবে।

শুধু ইসলামি বইপত্র প্রকাশ হচ্ছে তাই নয়, এসব বইপত্র এখন মানুষের হাতের নাগালে। সারাদেশেই এখন বই বেচাকেনা হয়। ইচ্ছা করলে ঘরে বসেও অনলাইন বুকশপের মাধ্যমে বইপত্র অনায়াসে সংগ্রহ করা যায়। আর মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে জানাশোনার আগ্রহও দিন দিন বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে বইপত্র পড়ার প্রবণতা কমলেও ইসলামি বইপত্রের চাহিদা জানান দেয়, এখনও মানুষ দীন সম্পর্কে জানতে বইয়ের আশ্রয় নেয়। শুধু মাদরাসা শিক্ষিতরা নয়, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যেও এখন ইসলামি বইপত্র পড়ার আগ্রহ ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। এটা খুবই ইতিবাচক একটি দিক। তবে শিক্ষিত মহল মানসম্পন্ন ও দলিলভিত্তিক বইপত্র খুঁজে বেড়ায়; সেই চাহিদা কতটা পূরণ করা যাচ্ছে তা পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

ইসলামি বইপত্র আগের চেয়ে অনেক সহজলভ্য হলেও এখনও তা পাঠকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অনেক সময় ইসলামি বইপত্র কিনতে চাইলেও সাধারণ মানুষের পক্ষে তা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বইমেলার আয়োজন নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ উদ্যোগ। শিল্প-সাহিত্যের ঊর্বর শহর ময়মনসিংহে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ইসলামি বইমেলার আয়োজন হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আরও বড় পরিসরে ইসলামি বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। খুবই সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে তৃণমূল পাঠকের দুয়ারে পৌঁছে যাবে ইসলামি বইপত্র। মফস্বলের একজন পাঠকও নিজের পছন্দমতো সেরা বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন। মহতি এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। আল্লাহ সবাইকে উপযুক্ত বদলা দিন।

লেখক: যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, ঢাকা মেইল; সম্পাদক, লেখকপত্র

*

*

Top